পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in S SR মানিক রচনাসমগ্র হারাণ আসে, মুখহাত ধোয়, সুপ্ৰভা ঘোমটা টানিয়া তাহাকে জলখাবার দেয। বকুল কিন্তু র্টেকিঘরেই বসিয়া থাকে। সুপ্রভা গিয়া বলে, ও বুকু, খাবিনে তুই ? তোর বাবা এল তুই এখেনে বসে আছিস ? -G Naig Kiki ti: | শোন কথা মেয়েব!—সুপ্ৰভা হাসে, আয়, চলে আয় আমার সঙ্গে, একলাটি এখানে তোকে বসে থাকতে হবে না। রাব্রিটা এখানে থাকিয়া পরদিন সকালে হারাণ কলিকাতা চলিয়া গেল। শ্যামা সাবধান হইয়া গিয়াছিল, হারাণকে অতিরিক্ত আত্মীয়তা জানাইবার কোনো চেষ্টাই সে করিল না। যাওয়ার সময় শুধু ঘটা করিয়া প্ৰণাম করিয়া বলিল, মেয়েকে ভুলবেন না বাবা। খুব ধীরে ধীরে শীতল আরোগ্যলাভ করিতে লাগিল। সে নিঝুম নিশচুপ হইয়া গিয়াছে। আপনা হইতে কথা সে একেবাবেই বলে না, অপরে বলিলে কখনও দু-এক কথায় জবাব দেয়, কখনও কিছু বলে না। কেহ কথা বলিলে বুঝিতে যেন তাহার দেরি হয়। ক্ষুধাতৃষ্ণা বোধও যেন তাহাব নাই, খাইতে দিলে খায়, না দিলে কখনও চায় না। চুপচাপ বিছানায় পড়িয়া থাকিয়া সে যে ভাবে তা তো নয়। এখানে আসিয়া কদিনের মধ্যে চোখ-ওঠা। তাহার সারিয়া গিয়াছে, সবসময় সে শূন্য দৃষ্টিতে চাহিয়া থাকে। দু বছর জেল খাটিলে মানুষ কি এমনি হইয়া যায়? কবে ছাড়া পাইয়াছিল শীতল। কলিকাতার বাড়িতে আসিয়াই সে তো ছিল দশ বারোদিন, তার আগে ? প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া কিছু জানা যায় নাই। পরে অল্পে অল্পে জানা গিয়াছে, পনেরো কুড়িদিন কোথায় কোথায় ঘুরিয়া শীতল কলিকাতাব বাড়িটাতে আশ্ৰয লইয়াছিল। জানিয়া শ্যামার বড়ো অনুতাপ হইয়াছে। এই দারুণ শীতে একখানা আলোয়ান মাত্র সম্বল করিষা স্বামী তাহার এক মাসের উপব কপৰ্দকহীন অবস্থায় যেখানে-সেখানে কাটাইয়াছে! জেলে থাকিবাব সময় শীতলের সঙ্গে সে যোগসূত্র রাখে নাই কেন? তবে তো সময মতো খবর পাইযা ওকে সে জেলের দেউড়ি হইতে সোজা বাড়ি লইয়া আসিতে পারিত ? প্ৰাণ দিয়া শ্যামা শীতলেব সেবা করে। শ্রান্তি নাই, শৈথিলা নাই, অবহেলা নাই। চারটি সন্তান শ্যামার ? আর একটি বাডিয়াছে। শীতল তো এখন শিশু। পরীক্ষার ফল বাহির হইলে জানা গিয়াছে বিধান ক্লাসে উঠিয়াছে প্রথম হইয়া। অ্যাট বনগাঁয়ে শ্যামার একে একে আবও চার বছর কাটিয়া গেল। কলিকাতার বাড়িটা তাহাকে বিক্ৰয় করিয়া দিতে হইয়াছে। ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করিয়া বিধান যখন কলিকাতায় পড়িতে গেল তখন,-শীতলের প্রত্যাবর্তনের এক বছর পরে। শীতলের অসুখের জন্য অনেক টাকা খরচ করিতে না হইলে রাখাল হয়তো শেষ পর্যন্ত বিধানের পড়ার খরচ দিতে রাজি হইত। বড়ো খারাপ অসুখ হইয়াছিল শীতলের। বেশি জ্বর, অনাহার, দারুণ শীতে উপযুক্ত আবরণের অভাব, মানসিক পীডা, এই সব মিলিয়া শীতলের স্নায়ুরোগ জন্মাইয়া দিয়াছিল, দেহের সমস্ত স্নায়ু তাহার উঠিয়াছিল ফুলিয়া। চিকিৎসার জন্য তাঁহাকে কলিকাতা লইয়া যাইতে হইয়াছিল। তিনমাস সে পড়িয়া ছিল হাসপাতালে। তারপর শ্যামার কঁদোকাটায় রাখাল আরও তিনমাস তাহার বৈদ্যুতিক চিকিৎসা চালাইয়াছিল। তার ফলে যতদূর সুস্থ হওয়া সম্ভব শীতল তা হইয়াছে। কিন্তু জীবনে সে যে কাজ-কর্ম কিছু কবিতে পরিবে সে ভরসা আর নাই। যতখানি তাহার অক্ষমতা নয়, ভান করে সে তার চেয়ে বেশি। শূইয়া বসিয়া অলস অকৰ্মণ্য দায়িত্বহীন জীবনযাপনের সুখটা টের পাইয়া হয়তো সে মুগ্ধ হইয়াছে। হয়তো সে সত্যই বিশ্বাস করে দারুণ সে অসুস্থ, কর্মজীবনের তাহার অবসান