পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী S (? দুমাস পরে বৈশাখ মাসে বকুলের বিবাহ হইয়াছিল। ছেলের নাম মোহিনী, ছেলের বাপেব নাম বিভূতি, নিবাস কৃষ্ণনগর। বিভূতি ছিল পোস্টমাস্টার, এখন অবসর লইয়াছে। মোহিনী পঞ্চাশ টাকায় ঢুকিয়াছে পোস্টাপিসে, আশা আছে বাপের মতো সেও পোস্টমাস্টার হইয়া অবসর লইতে পাবিবে। মোহিনী কাজ কবে কলিকাতায়, থাকে কাকার বাড়ি, যার নাম শ্ৰীপতি এবং যিনি মার্চেন্ট আপিসেব কেরানি । ছেলেটি ‘ভালো, আমাদের বকুলের বর মোহিনী। শান্ত নম্র স্বভাব, পঞ্চাশ টাকার চাকবি করে বলিয়া এতটুকু গৰ্ব নাই, প্রায় শঙ্করের মতোই লাজুক। দেখিতে মন্দ নয়, রং একটু ময়লা কিন্তু কী চোখ!-- বকুলের চোখের মতোই বড়ো হইবে। জামাই দেখিয়া শ্যামা খুশি হইয়াছে, সকলেই হইয়াছে। জামাইয়ের ব্যাপখুডার ব্যবহারেও কারও আখুশি হওয়ার কারণ ঘটে নাই, শ্বশুরবাডি হইতে বকুল ফিরিয়া আসিলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া জানা গিয়াছে শাশুড়ি-নিনদেরাও বকুলের মন্দ নয়, বকুলকে তারা পছন্দও করিয়াছে, আদর যত্ন মিষ্টি কথাবও কমতি বাখে নাই, কেবল এক পিসশাশুড়ি আছে বকুলেব সেই যা বৃঢ় কথা বলিয়াছে দুএকটা—বলিখাছে, ধেডে মাগি, বলিয়াছে তালগাছ! ধোয়া পাকা মেঝেতে পা পিছলাইয়া পডিয়া গিয়া বকুল যখন ডানহাতের শাখাটি ভাঙিযা ফেলিয়াছিল বিশেয কিছু কেহ তখন তাহাকে বলে নাই, কেবল ওই "ি - "শাশুড়ি অনেকক্ষণ বকাবিকি করিয়াছিল, বলিযাছিল অলক্ষ্মী, বলিযাছিল বজাত। বালুক, পিসশাশুড়ি কে ? শাশুড়ি ননন্দই আসল, তারা ভালো হইলেই হইল। বকুল বলিয়াছিল, না মা, পিসশাশুডিব প্ৰতাপ ওখানে সবার চেযে বেশি, সবাই তার কথায় ওঠে বসে। ঘরদের তাব কিনা সব, নগদ টাকা আর সম্পত্তিও নাকি অনেক আছে শুনলাম, তাইতে সবাই তাকে মেনে চলে। বুডিবা ভয়ে কেউ জোরে কথাটি কয় না মা। তাহা হইলে ভাবনার কথা বটে। শ্যামা অসন্তুষ্ট হইয়া বলিয়াছিল, কদিন ছিলি তার মধ্যে শাখা ভেঙে বুড়ির বিষনজবে পডলি! বউ-মানুষ তুই সেখানে, একটু সাবধানে চলাফেরা করতে হয়। বকুল বলিয়াছিল, পা পিছলে গেল, আমি কী করব? আমি তো ইচ্ছে কবে পড়িনি! সুপ্ৰভা বলিয়াছিল, মরুক পিসশাশুডি, জামাই ভালো হলেই হল। সব তো আর মনের মতো ଅସ୍ତ୍ କ{} ] AO তা বটে। স্বামাই তো স্ত্রীলোকের সব। স্বামী যদি ভালো হয, স্বামী যদি ভালোবাসে, হাজাব দজাল পিসশাশুড়ি থাক, কী আসিয়া যায় মেয়েমানুষের ? মোহিনী ভালোবাসে না বকুলকে ? মোটা মোটা চিঠি তো আসে। সপ্তাহে দুখানা ! ভালোবাসার কথা ছাড়া কী আর লেখে মোহিনী অত সব ? আর কী লিখিবার আছে তাহার ? সুপ্রভার মেয়েকে বকুল বরের চিঠি পড়িতে দেয়। শ্যামা, সুপ্ৰভা, মন্দা সকলে আগ্রহের সঙ্গে একবার তাকে প্রশ্ন করিয়াছিল, সে হাসিয়া বলিয়াছিল, ভেবো না মামি ভেবো না, যা কবিত্ব করে চিঠিতে, জামাই তোমার ভেড়া বনে গেছে। তবু, লুকাইয়া মেয়ের একখানা চিঠিতে শ্যামা চোখ বুলাইতে ছাড়ে নাই, টাঙানো লেপের বস্তার কোথায় কোন ফাকে চিঠিখানা। আপাতত গোপন করি যা বকুল স্নান করিতে গিযাছিল, শ্যামার কি তা নজর এড়াইয়াছে! চোরের মতো চিঠিখানা পড়িয়া শামা তো অবাক। এ সব কী লিখিয়াছে মোহিনী ? সব কথার মানেও যে শ্যামা বুঝিতে পারিল না ? কে জানে, হয়তো ভালোবাসার চিঠি এমনি হয়। শীতল তো কোনোদিন তাকে প্ৰেমপত্র লেখে নাই, সে কী জানে প্রেমপত্রের ?