পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী ՏԳ সে লক্ষ্মীপুজার পরেই আসিবে, শ্যামা তাই হাসিয়া এ কথা বলে, ব্যথািব সঙ্গে বলিবার প্রয়োজন ३23] = { পূজা উপলক্ষে মন্দা সাধারণভাবে খাওয়া-দাওয়ার ভালো ব্যবস্থা করিয়াছে, শ্যামা খরচপত্র করিয়া আরও বেশি আয়োজন করিল, আসার মতো আসা এই তো জামাইয়ের প্রথম। মোহিনীকে সে একপ্রস্থ ধুতিচাদর জামা জুতা কিনিয়া দিল, দিল দামি জিনিস, জামাই যে পঞ্চাশ টাকার চাকরে। শ্যামার টাকা ফুরাইয়া আসিয়াছে, কিন্তু কী করিবে, এ সব তো না করিলে নয়। কাজ করিতে করিতে শ্যামা বকুলেব ভাবভঙ্গি লক্ষ করে। মোহিনী আসিয়াছে বলিযা খুশি হয় নাই বকুল। এমন চাপা মেয়েটা তার, মুখ দেখিয়া কিছু কী বুঝিবার জো আছে! খাওয়া-দাওয়া শেয হইতে অনেক রাত্রি হয়, বকুল আসিয়া শ্যামার বিছানায় শূইয়া পড়ে, শ্যামা বলে, রাত অনেক হল, আর এখানে কেন মা ? ঘরে যাও । এখানেই শুই না। আমি ?—বকুল বলে। শ্যামা ভয় পাইয়া সুপ্রভার মেয়েকে ডাকিয়া আনে। সে টানাটানি করে, বকুল যাইতে চায় না, শ্যামার বুকের মধ্যে টিপঢিপ করিতে থাকে। শেষে ধৈর্য হারাইয়া শ্যামা দাঁতে দাঁত ঘষিয়া বলে, পোডারমুখি, কে...অক্ষাবি করে সকলের মুখে তুই চুনকালি দিবি ? যা বলছি যা, মেরে ছেচে ফেলব। তোকে আনি । সুপ্রভার মেযে বলে, আহা মামি, বকো না গো, যাচ্ছে। তাবপর বকুল উঠিয়া যায়। শ্যামা চুপ করিযী তক্তপোশে বসিয়া ভাবে। নানা কারণে সে বড়ো বিষাদ বোধ কবে। কে জানে কী আছে মেয়েটার মনে। পূজার সময, চাবিদিকে আনন্দ উৎসব, বিধানও কাছে নাই যে ছেলের মুখ দেখিয়া মনটা একটু শান্ত হয়। ছেলে বড়ো হইয়াছে তাই আবি কলেজ ছুটি হইলে ছুটিয়া মার কাছে আসে না, বন্ধুর সঙ্গে বেড়াইতে যায়। শীতল বোধ হয় বাহিরে তাসেব আড্ডায় বসিয়া আছে, শ্যামাব বারণ না মানিয়া সে আজ সিদ্ধি গিলিয়াছে একরাশি। কে আছে শ্যামার ? সারাদিনের খাটুনির পর শরীর শ্রান্ত অবসন্ন হইযা আসিয়াছে, মনের মধ্যে একটা দুঃসহ ভার চাপিয়া আছে, কত যে একা আর অসহায় মনে হইতেছে নিজেকে সেই শুধু তা জানে, এতটুকু সাস্তুনা দিবারও কেহ নাই। ভালো করিয়া আলো হওয়াব আগে উঠিয়া শ্যামা বকুলেব ঘরেব দরজায্য চোখ পাতিয়া দাওযায। বসিয়া রহিল। বকুল বাহির হইলে একবার সে তাহার মুখখানা দেখিবে। খানিক বসিযা থাকিয়া শ্যামাব লজ্জা করিতে লাগিল, এদিক ওদিক সে একটু ঘুবিয়া আসিল, পুকুরঘাটে গিযা মুখে চোখে জল দিল । এও এক শরৎকাল, শ্যামাব জীবনে এমন কত শরৎ আসিয়া গিয়াছে পুকুরের শীতল জল, ঘাসের কোমল শিশির শ্যামার মুখে আর চরণে কত কী নিবেদন জানায়। সে কী একদিন বকুলেৰ মতো ছিল ? কিবে ? তারপর ভিতরে গিয়া শ্যামা দেখিল, বকুলের ঘরের দরজা খোলা। কিন্তু বকুল কোথায় ? শ্যামা এদিক ওদিক তাকায়, সম্মুখ দিয়া পার হইয়া যাওয়ার সময় ভিতরে চাহিয়া দ্যাখে মশারি তোলা, বিছানা খালি, বকুল বা মোহিনী কেউ ঘরে নাই। এত ভোরে কোথায় গেল ওরা ? শ্যামা গালে হাত দিয়া সিঁড়িতে বসিয়া রহিল। রান্নাঘরের পাশ দিয়া চোরের মতো বাড়িতে ঢুকিয়া শ্যামাকে বসিয়া থাকিতে দেখিয়া দুজনেই তাহারা লজা পাইল। মোহিনী ঘরে চলিয়া গেল। বকুল শ্লথ পদে মার কাছে আসিল। কোথা গিয়েছিলি বকুল? মানিক ১ম-৭