পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in b মানিক রচনাসমগ্ৰ বকুল কথা বলে না। পাশে বসাইয়া শ্যামা একটা হাতে তাহাকে বেষ্টন করিয়া থাকে। তাই বটে, তেমনি রাঙা বটে। বকুলের মুখ, ঢেঁকিঘরে সেদিন শ্যামা যেমন দেখিয়াছিল। শুধু আজ ওর চোখ দুটি ছলছল নয়। দশমীর দিন বেলা দশটার সময় অপ্রত্যাশিতভাবে বিধান আসিল। শ্যামা আনন্দে অধীর হইযা বলিল, তুই যে চলে এলি খোকা ? মন টিকল না বুঝি সেখানে তোব ? হঠাৎ শ্যামার মন হালকা হইয়া গিয়াছে। সেদিন ভোরে মোহিনীর সঙ্গে বেড়াইয়া আসিয়া বকুলের মুখ যে বাঙা হইয়াছিল তা দেখিবার পরেও শ্যামাব মন কি ভার হইয়া ছিল ? ছিল বইকী!! শ্যামার ভাবনা কি শুধু বকুলের জন্য। এমনই শরৎকালে যাকে শ্যামা কোলে পাইয়াছিল, সোনার টুকরার সঙেগ লোকে যাকে তুলনা করে, তাকে না দেখিলে শ্যামাব ভালো লাগে না। মোহিনীর জন্য মাছ মাংস রাধিতে রাঁধিতে উন্মনা হইয়া চোখের জল সে ফেলিয়াছিল। কার জনা ? বিধান আসিয়াছে। আর শ্যামার দুঃখ নাই। পৃথিবীতে শরৎ আসিয়াছে হাসিব মতো, এতদিন শ্যামা হাসিতে পারে নাই। এবার শ্যামার মুখেও হাস ফুটিযাছে। পরদিন বকুলকে বিদায্য দিয়াও শামাব মুখ তাই বেশিক্ষণ স্নান রহিল না। বান্নাঘরে গিয়া তাব কাছে পিড়ি পাতিয়া বিধান বসিতে না বসিতে কখন যে সে ভুলিযা গেল মেয়ের বিরহ! শ্যামার মনে আবাব নিবিড হইযা আর্থিক দূর্ভাবনা ঘনাই যা আসিয়াছে। এবার আর কোনোদিকে সে উপায় দেখিতে পায় না। আগে দুরবস্থায় পড়িয়া একটা ভরসা সে করিতে পারিত, বাডিটা বিক্ৰয় কবিযা দিলে মোটা কিছু টাকা পাওয়া যাইবে। এখন সে ভবসাও নাই ! বাড়ি বিক্রির অন্তগুলি টাকা কেমন কবিয নিঃশেষ হইযা গেল? অপচয় করিয়াছে নাকি সে? হয়তো আরও হিসাব করিয়া খরচ করা উচিত ছিল। এক সঙ্গে অনেকগুলি টাকা হাতে পাইয়া নিজেকে হয়তো সে বড়োলোক ঠাওরাইয়াই বসিযাছিল। তবে এ কথা সত্য যে এ কবছর একটি পয়সাও ঘরে আসে নাই। ফোটা-কেঁটা করিয়া ঢালিলেও কলসির জল একদিন শেষ হইযা যায়। বিধানের পড়ার খবচও কী সহজ। বকুলেব বিবাহেও ঢের টাকা লাগিয়াছে। কিন্তু এখন উপায় ? শ্যামা এবার একটু মন দিযা শীতলের ভাবভঙ্গি লক্ষ করিতে লাগিল। খায়দায় তামাক টানিয়া তাসপাশা খেলিয়া দিন কটায়, হাঁটে একটু খেড়াইয়া, বদহজমে ভোগে, রাত্রে ভালো ঘুম হয় না। তবু কিছু কি শীতল কবিতে পারে না ? ঘরে বসিয়া থাকিয়াই হযতো সে একেবারে সারিয়া’ উঠিতে পারিতেছে না, কাজেকর্মে মন দিলে হয়তো সুস্থ হইবে! চুলে শীতলের পাক ধরিয়াছে। বিবৰ্ণ কপোলের ঠিক উপরে একগোছা চুল একেবারে সাদা হইয়া গিয়াছে। না, বয়স শীতলের কম হয় নাই। বিবাহ সে বেশি বয়সেই করিয়াছিল, বয়স এখন ওর পঞ্চাশের কাছে গিয়াছে বইকী। তবু, পঞ্চাশ বছৰ বয়সে পুরুষ মানুষ কি রোজগার করে না? হারাণ পয়ষট্টি বছর পর্যন্ত কত টাকা উপাৰ্জন করিয়াছে, শীতল কি কিছু ঘরে আনিতে পারে না, যৎসামান্য? পঞ্চাশটা টাকা অন্তত? আর কিছু হোক বা না হোক, বিধানের পড়ার খরচ তো দিতে হইবে। মৃদুমৃদু শীত পড়িয়াছে। কেঁাচার খুঁট গায়ে জড়াইয়া বাহিরের অঙ্গনের জামগাছটার গোড়ায় বেতের মোড়াতে বসিয়া শীতল তামাক টানে। বাড়ির পোষা কুকুরটা পায়ের কাছে মুখ গুজিয়া