পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খতিয়ান Sov) দাখ গিরীন দ্যাখ, ধেড়ে মেয়ের কাণ্ড দ্যাখ। ডাল ধুতে দিয়েছি, লুকিয়ে কাঁচা ডাল চিবোচ্ছে ! গিরীনের মা থেমে যান, জিভ কাটেন। মেয়েটি পালিয়ে যায় হাত ছিনিয়ে নিয়ে। এক মুহূর্ত হতভাম্বের মতো দাঁড়িয়ে থেকে মা-ও সরে যান। আমি এবার উঠি গিরীন। একটু বসুন। গিরীন বেরিয়ে যায়। গিরীন ফিরে আসবার একটু পরে সেই চুপি-চুপি ডাল-খাওয়া মেয়েটি একটি রেকবিতে দুটি সন্দেশ, একটি কলা, কয়েক টুকরা আপেল ও শশা নিয়ে জড়োসড়ো হয়ে ঘরে আসে। বাঙালি গোরস্ত ঘরের হিসাবে বিয়ের বয়স তার পেরিয়ে গেছে। অনেকদিন। মেয়েটি রোগা, পুষ্টি অভাবে সত্যিকারের রোগ। সত্যিকারের রোগা মেয়ের দিকে তাকাবার মোহ কিন্তু তখনকার মতো কেটে গিয়েছিল রায় বাহাদুরের। নীরবে সে দু-এক টুকরা ফল মুখে দিতে থাকে। বৈঠকখানা দিয়ে যাবাব সময় চৌকির প্রাস্তের জরাজীর্ণ মানুষটি কষ্ট চোখ মেলে তাকায়। রায় বাহাদুর এক নজর দেখেই তাড়াতাড়ি চলে যায় বাইরে। সোমবার গিরীন নোটিশ পায় বরখাস্তের। নোটিশ সে প্রত্যাশা করছিল। ক্ষমতা থাকলে ফাঁসির হুকুম দিত রায় বাহাদুর। কিন্তু একটা কথা জানে গিরীন। রায় বাহাদুর ভুলতে পারবে না, তার ভয় করবে। শিক্ষকদের দাবি দাবী মাহাত্ম্য কীর্তন করে শোনাতে গিয়ে একটু আটকে আটকে যাবে কথাগুলি, উচ্ছােসটা হবে মন্দা। দয়া-মায়া সহানুভূতিতে নয়, ভযে।