পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>のbr মানিক রচনাসমগ্র একদিন খপর পেলাম, রিলিফখানার জন্যে মোটা মতো সরকারি চালান আরেকটা এযেছে অ্যাদিন পরে, সাতদিন কেন পুরো আধ মাস সত্যিকারের ঘন খিচুড়ি বিলোনো চলবে। কিন্তু দেখে শুনে তখন অভিজ্ঞতা জন্মে গেছে। বাবু। যত চালান আসুক, একটা দিনের বিলানো খিচুড়িও সত্যিকারের খিচুড়ি হবে না, চাল-ডাল বেশির ভাগ চলে যাবে চোরাবাজারে। সদরে জানা চেনা লোক ছিল কটা। মানে আর কী, আপনার কাছে ঢাকাঢাক গুড়গুড় করব না, শহরের চোর, ছ্যাচড়, গুন্ডা, বজাত, চোর-গোপ্ত ছোরা মারা গোছের লোকের সদর কজন আর কী। ওপরওলাদের সাথে খাতির ছিল ওদের, ওদের ছাড়া চলে না। সরকারি বেসরকারি বড়ো কত্তাদের চোরাকারবার। ওদের একজন একটা ব্যাপারে সাথে ছিল মোর কবছৰ আগে, বড়ো বাঁচান বাঁচিয়েছিলাম দু-দশবছরের জেল থেকে। একটু খাতির করল, খানিকটা মাত্তর। ওর মারফতে আব্ব দু-চারজনকে জড়ো করে, তারাও চিনত জানত মোকে, চাল চেলে, ভাওতা মেরে কাণ্ড কবিয়ে দিলাম। একটা বেলের ইস্টিশানে। চাদিকে হইচই পড়ে গেল। চালানি চাল-ডাল সব গেল রিলিফখানার গুদাম, শেষ বস্তাটি ! বলে না। পিত্যয় যাবেন বাবু, পুরো চারটি দিন ঘন খিচুড়িব সাথে একটা করে আলুসেদ্ধ খেল ভিখিরির দলকে দল সবাই ! আদেক লোককে দিতে না দিতে ফুরিয়ে গেল না খিচুড়ি, কেউ বলল না ধমক দিয়ে, ও বেলা আসিস, এখন ভাগ শালার ব্যাটা শালা। আর-- এটাই আসল কথা মন দিযে শোনেন বাবু। ছিনিয়ে খেয়ে বঁাঁচবার কথা যারা কেউ কানে তোলেনি, দুটাে দিন দুবেলা এক মগ ঘন চাল-ডাল আর একটা কবে আলুসেদ্ধ খেযে সকলে কান পেতে শুনতে লাগল আমাৰ কথা, সাব্য দিতে লাগল যে এই ঠিক, এ ছাড়া বাঁচবার উপায় নেই। মুখেব গ্রাস নিযে ছিনিমিনি খেলছে। বজাতরা, কেড়ে নিতে হবে সব, পেট পুরে খেযে বাঁচতে হবে দুবেলা। আমি যা বলি, সবাই সায় দিয়ে তাই বলে। ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারি না, মাথা গলিযে যায। পরদিন যেন উৎসাহ আব্বও বেড়ে যায়। পরের দিন তাদেরই কজন নিজে থেকে আমার কাছে এসে বলে যে তারা গৃন্দোম থেকে চাল-ডাল ছিনিয়ে নিতে রাজি, নিজেরা বেঁধে-বেড়ে খাবে। আমি অ্যাদ্দিন জাপাচ্ছি তাদেব, আমাকে ঠিকঠাক করে চালাতে হবে কখন কী ভাবে কোথায় কী করতে হবে গুদাম থেকে মালপত্তব সব লুটপাট করে নিতে হলে। ፭ কী বোকামিটাই করলাম সেদিন বাবু। ভাবলাম কী, এমন আবোল-তাবোল ভাবে নয়, মাঝে মাঝে তিন বন্দুকওলা জমিদারের বাড়ি হানা দেবার আগে যেমন ভাবে দল গড়েছি শিখিয়ে পড়িয়ে এই না ভেবে পিছিয়ে দিলাম। সবাইকে নিয়ে দেওয়াটা কদিনের জন্যে। রাতারাতি মিলিটারি লরি৩ে চালান হয়ে গেল রিলিফখানার গুদামের আদেক মাল। পরদিন সেই রং কিবা জলো খিচুড়ি। তাতে যেন জোর বেড়েছে মনে হল সকলের দল বেঁধে ছিনিয়ে খাওয়ার সাধটার। মোকে ঘিবে ধরে শ দেড়েক মাগিমদ বলতে লাগল, চলো না। যাই, ছিনিয়ে আনি ধানচাল। বাচ্চাগুলো পর্যন্ত उछ्त्राङ व्लांकान्त । বৈকুণ্ঠ সার গুদামে কম করে তিন হাজার মন চাল আছে জানতাম। চালান দেবার ব্যাপারে কত্তাদের সাথে ভাগ-বঁটোয়ারায় মীমাংসা না হওয়ায় ব্যাটার গৃদোমে মাল শুধু জমছিল মাসখানেক। গুদোমিটার হদিস-টদিস নিয়ে কালক্ষণ সুযোণ ঠাহর করতে দুটাে দিন কেটে গেল। যখন বললাম কীভাবে কী মতলব করেছি। সার গুদামের জমানো অয় ছিনিয়ে নেবার, তেমন যেন সাড়া এলো না সবার কাছ থেকে। শুধু তাদের নয়, চাদিকের কম করে হাজারটা ভুখা মেয়ে, পুরুষ, বাচ্চাকাচ্চাদের বাঁচবার উপায় হবে বললাম, সায় এলো কেমন মন-মরা ঝিমোনো মতোন। পরদিন কেউ যেন কান দিল না। আমার কথায়। জলো খিচুড়ি বাগাবার ভাবনায় সবাই যেন ফের আবার মশগুল হয়ে গেছে, আর কিছু ভাববার ক্ষেমতা নেই, মন নেই !