পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Y SVe মানিক রচনাসমগ্র দু-চারদিন ধারে কাছে না ঘোিষলে একটু যেন ত্ৰ্যম্বক মতি ডাক্তারের সঙ্গ চায়, তার ফেনানো ফাপানো মিথ্যা। আশা আশ্বাস ভরসার কথাগুলি শোনার প্রয়োজন বোধ করে, বেশির ভাগ না। মানলেও তার নির্দেশ উপদেশ ব্যবস্থার কথা শুনতে বেশ একটু ইচ্ছা জাগে ! ভাঙা মানুষ মরা মানুষ তো এতখানি হতাশ হতে পারে না যে, কেউ তাকে জোড়া দেবার বাঁচাবার প্রাণপণ চেষ্টা করছে জেনেও চুপচাপ মুখ গজে মীরবে ! নিভীক বেপরোয়া আশ্বাসের মতো সঞ্জীবনী আর কিছু নেই। তাই না জগতের ডাক্তাররা মুমূর্ষর দেহে সুনিশ্চিত মরণকে প্রত্যক্ষ দেখেও বলে, ভয় কী, সেরে উঠলেন। একটা সুবিধা হয়েছে মতি ডাক্তারের। জন্ডিস কাবু করেছে বটে ত্র্যম্বককে, আবার সেই সঙ্গে বিস্বাদ বিশ্ৰী করে দিয়েছে সিগারেট থেকে তার সব নেশা। নতুন বিষ শরীরে আনা ঠেকানো গেছে সহজেই। একজনকে আশা আশ্বাস দিতে দিতে একটি ঝলসানো জীবনকে পাপমুক্ত করার সাধনায় টাকা আর পাশারের লোভেই মনপ্ৰাণ ঢেলে দিয়ে আশ্চর্য এক আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠতে থাকে মতি ডাক্তারের মধ্যে, এতদিনের শ্ৰান্ত হতাশ জীবনের রূপ বদলে যেতে থাকে অদ্ভুতরকম। অন্তর যেন নতুন এক ভাষায় গুঞ্জন করে বলে যে, টাকা তো আসবেই, পশার তো হবেই, কিন্তু কী হবে সে টাকা আর পাশার যদি না যদি না কী ? সেটা কোনোমতেই স্পষ্ট হয় না। গায়ের আধা সরকারি হাসপাতালের এল এম এফ ডাক্তার মতিলালের কাছে ! শুধু মনে হয় আরও কতগুলি কিছু না হলে, যেখানে যাদের মধ্যে যা কিছু নিয়ে বসবাস ও জীবনযাপন তার মধ্যে কিছু সামঞ্জস্য কিছু সার্থকতা না এলে, শুধু নিজেব টাকা আর পাশার নিয়ে বুঝি সে রকম খুশি হওয়া যাবে না ! বাঁধা টাইমের পরে যে রোগী আসে তাকে আজও ধমক দেয় মতি ডাক্তার কিন্তু কেন যেন ব্যঞ্জগাত্মক গালটা আসে না। বলে, বাপু তুমি কি চাকর রেখেছ হাসপাতালের ডাক্তারবাবুকে ? যখন খুশি আসবে। আর সুকুম দেবে ওষুধ দিতে ? ap দেড় কোশ হেঁটে এইছি বাবা ! দেড় কোশ হেঁটে যাও। কাল ফের দেড় কোশ হেঁটে এসো সময়মতো। তোদের জন্য মরব নাকি আমি ? আয় ইদিকে, চটপট আয়। ব্যাটার নড়তে লাগে দশ ঘণ্টা। জিভ বার করা। সে বেচারা কাতর হয়ে বলে, কর্তা, মরণ ভালো ছিল মোর। মতি ডাক্তার গ্রাহ্য করে না, বলে, জুর কদিন ? আজ্ঞে চলছে ঘুষ ঘুম ঢ়ের দিন থে। কাশি আছে নাকি ? আছে। রক্ত পড়ে ? একটু একটু পড়ে আজ্ঞে। তাব দিকে চেয়ে থাকে মতি ডাক্তার। ছেড়া লুঙ্গি পরা খালি গা একটা জ্যাস্ত ভূত, পেট ভরে দুবেলা ভাত জোটে না, তার এই রাজকীয় রোগের এখন কী চিকিৎসার ব্যবস্থা সে করে, কী ওষুধ দেয়। রাজ-টাজা হলে নয় বলে দেওয়া যেত মাসখানেক দুধ ঘি মাছ মাংস আঙুর বেদান খেয়ে এস ওষুধ নিতে। x খাটো কোথা ? সদরের কাপড় কলে। শরীরে বয় না। তাই দেশের ঘরে এলাম যে জ্বরটা যদি ছাড়ে, দেহটা যদি সারে।