পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/২০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাটির মাশুল Soዒ খাবা না ? এসে শুধিয়ে যায় ভূষণের বিধবা পিসি দয়াব বিধবা মেয়ে হারাণি। দুক্তোর নিকুচি করেছে তোর খাওয়ার, রেগে তেড়ে-মেড়ে ওঠে ভূষণ, দিবি তো দুধ পোয়া মাপে আলুনি ফ্যান-ভাত, ডাকের কামাই নেই, লুচি-পোলাউ ভোজ খেতে ডাকছে যেন হারামজ্যাদি। খেয়ে কেঁদে-ওঠা শিশুই আছে এখনও, আর নাক দিয়েও তার সিকনি নামে সেই ছেলেবেলার মতো, নাক টেনে টেনেও সামলাতে পারে না। মরণ ঠেকাবার উপায় খোঁজার জন্য জড়ো এই চাষির আসরে যেন ছেড়াতালি কাপাসে আধঢাকা রোগ বুগণা মূর্তিমতী বিদ্ম। পুরাণে নজির আছে, পিনাক সামন্ত, ভাবে খুশি হয়ে, অৰ্জ্জুনের তপস্যা ভাঙতে এমনি ভাবে এয়েছিল উর্বশী-মেয়েগুলো মরে না, এই যুবতি মেয়োগুলো ? আমি ডেকেছি ? মা বলল না ডাকতে ? নিজে যদি এসে ডেকে থাকি তো-নাকের জল চোখের জল খেতে খেতে কথা বলতে গিয়ে বিষম লাগে হারাণির। আচমকা অন্দরের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে ঠাস করে গালে তাব একটা চড় বসিয়ে দয়া তাকে ভেতবে টেনে নিয়ে যায়। লম্বা নিশ্বাস ফেলে ভূষণ বলে, শহরে ছিল বছর দেড়েক দুযেক। দুর্ভিক্ষের ফলে পুষতে পারিনি, মোর যে দাদা দুকান করে শহবে, তার ঠেয়ে পাঠিয়েছিনু মরতে। এমনি দশা হযে ফেরত এযেছে মেয়ে। কী - কি ব্যারাম হযেছিল- শহবে ব্যারাম। কি দুকান করে হে নয়ন শহরে ? একজন শূধ্যায। চুপ করে থাকে ভুষণ।। শুনি তো কত কাল নয়ন না কি দুকান করে, তা দুকানটা কীসের ? কী জানি কীসের দুকান। এবাব বেগে বলে ভূষণ। আঃ হাঃ, তোরাব বলে জোর দিয়ে, দুকানেব কথা যাক। ধবণীর দুটাে খামারের ধানের কথা বলাবলি, উয়ার মন্দ্যি দুকান ! কী দুকান, কীসেব দুকান। কাজের কথা কও। সাতনালার খামারে লোকজন বেশি রায় না। শুনে সবাই আবাবা ধাতস্থ হযে গুম খাম। ধরণীর একটা খামার আছে সাতনালায়। ধান বোঝাই খামার। তা সে খামার তো আগেও ছিল, এখনও আছে, কী তাতে। সবাই জানে আজ এই মরিয়া বেপরোয়া মানুষগুলির আসরে ধরণীর ওই ধান বোঝাই খামারের কথা ওঠার মানে কী, খামারে লোকজন বেশি থাকে না। এ কথা বলারও মানে কী। তবে কি না, যার যাব মনে মনে বোঝা কথাও সবার মিলেমিশে একসাথে একীভাবে বোঝা তো দরকার। তা বটে, রাজেন বলে, উয়ার খামাব-ভরা ধান, মোদের দুর্দশা । ধানে উয়ার স্বত্ব কী ? ब्लूरैल १ान ना ? আসলে মোদেরই ধান তো, না কি বলে ? গায়ের জোরে কেড়ে নেছে বই ত না ? এ তো একই কথা, ঘুরিয়ে বলা। এত দূর এগিয়েও পরের কথাটা জিবের ডগায় এসে আটকে আছে অনেকের। ধীর, অতি ধীর জীবন এদের-অকলে বুড়িয়ে ঝরে যায়, তবু ধীর। ঘুম ভাঙে হাই তোলে, আড়মোড়া ভাঙে, সন্দ করে যে সত্যি রাত শেষ না চাঁদের আলোর আভা বাইরে-না, ভোরই হচ্ছে, কাকের ডাক শোনা যায়। মাঠে গিয়ে লাঙলের ফলা মাটিতে ডারায়, ফসলের আশা তার কাল নয়, পরশু নয়, মাসকাবারে নয়, সেই ফসল ফলাবার পর। ধৈর্য ছাড়া তার কি চলে, ধীর না হয়ে উপায় আছে ?