পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/২২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SS মানিক রচনাসমগ্ৰ নিয়মকানুন মানার দিকে নজর দেবে কে, সবাই যখন পচন বাড়াতে ব্যস্ত তাতেই যখন লাভ। রাখালেরও আগের দিনের তাগিদ নেই, সুনীল নতুন কাজে ঢুকেছে, তারও না। তবে বিমলকে যেতে হবে যথাসময়ে, তার বেসরকারি চাকরি। হঠাৎ বৃষ্টি ধরে গেলে ছুটতে হবে সকলকেই-নুন ভাত তো পেটে দেওয়া চাই। তাছাড়া, খিদেও তো আছে। আমরা বঁচিব ? বাঁচব না-ধ্বংস হয়ে যাব। ধর্ম ভুলে গেছি, ধর্মের জন্য প্ৰাণ দিতে পারি না-যে জোর দেখায় তার সঙ্গেই আপস। কী করে বঁচিব ? তরকারির ঝুড়িটার দিকে চেয়ে থেকে রাখাল চড়া গলায় ঘোষণা করে, ঘরে ধোঁয়া। নইলে যেন তার কথার মানে অস্পষ্ট করে রাখবে। সবাই শোনে, কেউ কান দেয় না। শুধু চচ্চড়ি দিয়ে ভাত খাওয়া তো নয়, অনেক কিছুই জীবন অতিষ্ঠা করে তুলে সর্বদাই তাকে দিয়ে কথাটা ঘোষণা কবাচ্ছে। কত শোনা যায ? ছেলেপিলে কঁদে কোকায়, ঝগড়া করে, চলতে থাকে তাদের সামলানো, শাস্ত করা-কেমন যেন সমারোহ ছাড়াই ! আগের দিনে ঘরবাড়ি সরগরম হয়ে উঠত বাচ্চাদের চেচামেচি কঁাদাকাটার সঙ্গে তাদের আওয়াজ ছাড়িয়ে ওঠা বড়োদের বিরক্তির ঝংকার মিশে। তেমন বিরক্ত কেউ যেন আব হয় না, এমন অসহ্য হয়ে উঠেছে বেঁচে থাকা, তবু অথবা হয়তো সেই জন্যেই-আশ্চর্য এক ধৈৰ্য এসেছে সবার মধ্যে, অপরূপ এক সহ্যশক্তি। তবে সে রকম আদরও কেউ আর করে না, বাচ্চাকাচ্চাকে হরদম বুকে চেপে চুমু খেয়ে সোনা আমার মানিক আমার বলে বলে আবেগে গলে গিয়ে এবং গলিয়ে দিতে ব্যাকুল হয়ে-কল্পনার মোটাসোটা অমন সুন্দব কোলের ছেলেটার পর্যন্ত ভাবাবেগের বাজারে দীর নেই। এখনও মাই ছেড়ে বোগা বিচ্ছিরি হতে পারেনি ছেলেটা, বুকে দুধও পায় মোটামুটি-কল্পনার স্বাস্থ্য অসাধারণ ভালো ছিল। আধভেজা কাপড় পরে আছে কল্পনা, এখানে ওখানে ছেড়া। তা, ছেড়াকাপড় সবাই পরে, যে অবস্থায় পৌঁছোবার অনেক আগেই কঁথা-ন্যাকড়া হয়ে যেত ধুতিশাড়ি, সে অবস্থাতেও ! তবে, একটু জুর এসেছে কল্পনার এই যা। এসেছে দিন তিনেক। দালানে মেলা বড়োবউ অতসীর শাড়িখানা শুকিয়েছে। রেশনের নতুন শাড়ি। দাও না দিদি, ভিজে কাপড়টা ছাড়ি ? শীত করছে।-হঠাৎ কল্পনা অনুরোধ জানিযে বসে, একটু যেন দাবির মতো জোরের সঙ্গে। মনে তার একটা জ্বালা ছিল ! নেয়ে উঠে আমি পরব কী ? জুরতপ্ত মুখ আরও লাল হয়ে ওঠে কল্পনার -- এবারও রেশনের কাপড়টা তো কায়দা করে-মবুক গে যাক। ঝিমিয়ে পিছিয়ে যায় কল্পনা। জুরের দুর্বলতায় নয়, কলহ করার তেজ জ্বরে বাড়ে বই কমে না,-কিন্তু কেমন যেন উৎসাহ পায় না মনের মধ্যে ! কী কায়দা শুনি ? ঘাড় তোলে অতসী, কীসের কায়দা ? শোনো দিকি কথা একবার ! শঙ্কিত চোখে নন্দিনী চেয়ে থাকে। কিন্তু আর এগোয় না বিবাদ, চোখে চোখে খানিক তাকিয়ে থেকে দুজনে ঝামটা মেরে শুধু মুখ ফিরিয়ে নেয়। ঝগড়াবীটিরও যেন কী হয়েছে আজকাল। জমে না । ভিজে কাপড় পরে আছ ? বলতে পার না ? বললে একখানা শূকনো কাপড় তোমার জোটে नों ? नN3, 6ों नहीं। কল্যাণ মেজোবউদিকে একখানা সরূপাড় ধুতি এগিয়ে দেয়। কল্পনা হেসে বলে, ধ্যেত। কেন ? কী হয় পরলে ? নন্দিনী বলে, কত সধবা থান পেলে বর্তে যাচ্ছে !