পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/২২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাটির মাশুল RRes দিবা।বাত্রি সুখে-দুঃখে হাসি-কান্নায় মহাশূন্যে নির্ভরহীনতার আতঙ্কের মতো এই ভয়াবহ শূন্যতাবোধ জেগে থাকছে যে, সব মিছে-এই শেষ ? জীবনটাই বুঝি এমনই ছেলেখেলার ব্যাপার, বিশ্ৰী। প্ৰতিবিধানের সাধ্যমতো চেষ্টা করে। সিনেমায় যাবে ? চল যাই। বেশ কাটে কয় ঘণ্টা। সনৎ বিশেষ করে যেতে বলেছে কিন্তু। না গিয়ে উপায় আছে ? বেশ কাটে কয়েক ঘণ্টা । রবিবার ডাকলে হয় না। ওদের ? নীলাকে পাওয়া যাবে গান গাইতে । বেশ কাটে কয়েক ঘণ্টা। মোটে বারোদিন ছুটি। তবু চলো, ঘুরে আসি। অনেকদিন বাইরে যাওয়া হয়নি। টাকা ? সে হয়ে সাবে। বেশ কাটে নটা দিন দিদির বাড়িতে, পাহাড়ে, বনে, ঝরনায়। কিন্তু সে তো কতকগুলি ঘণ্টা, কয়েকটা দিন ! ঘুষ দিয়ে কি জীবনকে বাগানো যায় ! সুনীল সৌম্যোনের অন্তরঙ্গ বন্ধু। মনোবিজ্ঞানে বিদেশি ডিগ্রি নিয়ে এসে দেশি কলেজে ইংরেজি সাহিত্য পড়ায়। সে বলে, না, এটা কোনো বিশেষ মানসিক রোগের লক্ষণ নয়। কী জানিস, আমাদের মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েদের এটা বৈশিষ্ট্য। ঝগড়া করে কেঁদে কেটে আদর চায়। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সব মেয়ে এক রকম । আদর চায় ? আব্দর ? ঝগড়া আব্ব কঁদকাটার পর আদর তো তমসা পায় না, চায়ও না। কে জানে ! সৌম্যেন ভাবে, কে জানে ! ঝগড়ার পর আদর করতে যায় পরদিন তমসাকে

  • এ আবার কী তামাশা ? তমসা বলে তাকে । A.

পাতলা কাঠির তক্তা গেথে, সাদা পেন্ট মাখিয়ে, দুভাগ-করা দোতলা। ও পাশের বাড়িতে নির্মল দস্তিদার থাকে। সৌমেন্যের সমবয়সি, বিদ্যা মাত্ৰ দুবার বি এ ফেলের, চাকরি অনেক নিচুস্তরের সৌম্যেনের চাকরির তুলনায়, আয়টা সামান্য কিছু বেশি উপরি নিয়ে। স্ত্রীর নাম নলিনী, বয়সে দু-তিনবছরের ছোটাে হবে তমসার। বৃপসি বেশিই হবে সব হিসেবে। আশ্চর্য এই ছেলে আর মেয়ে-দুটি দুজনের প্রায় একবয়সি। নলিনী বলে, আপনি যদি মুখু হতেন দিদি আমার মতো, সই পাতােতাম। আপনার সাথে। নির্মল অতটা সরল নয়। সৌম্যোনের দাম্পত্য ব্যাপার নিয়ে সোজাসুজি উপদেশ ঝাড়বার সাহসও তার হয় না। ইশপের মতো গল্পছলে সে দাওয়াই বাতলে দেয়। একবার নয়, অনেকবার। যে কোনো প্রসঙ্গে গল্পটা টেনে আনতেও অসুবিধা হয় না, বিজ্ঞাপন-লেখকদের মতো এ বিষয়ে সে নিরঙ্কুশ একসপার্ট। বলছেন তো দিন আর এক কাপ। ওতে আর কী। দু-চার্যকাপ বেশি চা খাওয়া অভ্যাসও হয়ে গেছে আজকাল। -সুন্দর চা করেন আপনার স্ত্রী, ভাগ্যবান মশায় আপনি-আগে ছিল না। আগেমানে ওই বেশি চা খাবার অভ্যাসের কথা বলছি। সকালে এক কাপ, বিকালে এক কাপ বাধা। এক কাপ যদি বেশি চেয়েছি কোনোদিন, সদিটর্দি হলে পর্যন্ত-সেকি কাণ্ড মশাই, একেবারে যেন দাঁতমুখ