পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাটির মাশুল ఛ{\ని তখন সে ছাত্র, চরকা মানে, খদ্দর পরে। আদর্শের চেয়েও জগতে বড়ো কিছু থাকতে পারে, বাস্তব অবস্থার ফেরে পড়া কোনো একটা মানুষেবা দশটা টাকার মায়া ছাপিয়ে উঠতে পারে। মনের চাপা আগুনকে, তখন এ কথা ভাবতেওঁ গা তার লজ্জায় ঘূণায় শিউরে উঠত। লেখককে সে অভিশাপ দিয়েছিল। স্বাধীনতার অভিযান চলছে, সারা দেশে বিরাট ব্যাপক আন্দোলন, শোভাযাত্ৰা আর ছেলেদের জয়ধ্বনি করে ওঠার মতো নাটকীয় অবস্থায় সাময়িক একটা ক্টোকিও চাপল না। কেরানিটির যে যাক যাক, দেশের জন্য যাক আমার দশটাকার নোটটা ? গুনে গেথে সে ফিরিয়ে নিল ভাঙনি টাকা । দুঃখ-দুৰ্দশার, অভাব-অনটনের, বাস্তবতাব নামে কী কুৎসিত অপপ্রচার--মানুষের হৃদয়াবেগের চেয়ে টাকাকে বড়ো করা ! আজ সেও দশ টাকার একটা নোট নিয়েই সকালবেলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে চালের চোরাবাজার হয়ে মাছ-তরকারির চোরাবাজারে এসেছে। আজ আব্ব দশটা টাকার নোটে কেবানিব দেশপ্ৰেমকে ঘায়েল করার জন্য পনেরো বছরের পুরানো সেই গল্পেব লেখককে গাল দিতে সাধ যায না। কী যেন চাপা ছিল সেই ত্যাগের মন্ত্রে গড়ে তোলা দেশপ্রোমেব মধ্যে, একটা মস্ত মিথ্যা বিরাট ফাকি ; যাব সে আবেগ, অপবিত্র মাটির পৃথিবীর বাস্তব মানুষ তাকে অশুদ্ধ প্ৰাণেব জালায় বদলে নিয়ে বুদ্ধ চৈতন্যের তুচ্ছ ত্যাগের চেয়ে ঢের বড়ো ত্যাগ ঘর-সংসাব সুখ শাস্তির সঙ্গে জীবনটা পর্যন্ত দান করতে মেতে উঠলে তারাই রাশ টেনে ধবত-আকাশে ছড়ানো মহান বাপরাশির মোহ কাটিয়ে জীবনের বিরাট ইঞ্জিন প্ৰাণেব আগুনে কঠিন প্ৰতিজ্ঞার ইস্পাতে আটক নিজের বাস্পেই দুৰ্দান্ত চাপ সৃষ্টি কবে চাকা ঘুরিয়ে চলতে আরম্ভ করলেই ওই ফাকিব সেফটি ভালভ খুলে ফুস করে বার করে দেওয়া হত শক্তির চাপ, অনড় নিশ্চল হয়ে যেত গতি। শোভাযাত্রার ছেলেরা জযধ্বনি কবে উঠলেও কেন সেই কেরানি ফিরিয়ে নেবে না ভাঙানি ? তাব দেশপ্রেমের জগতের সঙ্গে তো যোগ ছিল না। তাব ওই দশটা টাকায় বাকি মাস সংসার চালাবার জগৎটার ! এ জগতের ত্যাগ সে কী করে পৌঁছে দেবে। আর এক জগতে, কী করে সে ভাববে যে দেশের জন্য ত্যাগ করার সঙ্গে তার অচল প্ৰায় কষ্টকর জীবনযাত্রা চালু হবাব যোগ আছে ? বাজারে ভাপসা বাতাসে পচা মাছের গন্ধ। পচা মাছ চালানও আসে বাজাবে, বিকিও হযে যায়। দাম একটু সস্তা। তার দেশপ্ৰেম থেকে কি এমনই পচা গন্ধ পায় নলিনী ?