পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/৩০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

wboS মানিক রচনাসমগ্ৰ একটা কার্ডের রেশন আনা বাকি আছে, এ বেলা না আনলেও উপায় নেই। শনিবার বিকালে রেশন দেয় না, রবিবার দোকান বন্ধ। আটা চাল আনাই চাই এ বেলা । এ জুলা পেটের জ্বালার চেয়ে বেশি, কারণ পেটের জ্বালাতেই এর জন্ম। ময়লা ন্যান্তানো এক টাকার নোটটা হাতে পেয়েই গোবরার মা তাই একটা শাপ ঝেড়ে দেয়, সুখলালের একটা টাকাও না তার মুখ থেকে। শিল্পী কবির কায়দা খাটিয়ে ঝাঁঝালো হাসি হেসে বলে, সিথেয়। অত যে সিঁদুর সঁটে তোমার লক্ষ্মী, তেলে জবজবিয়ে, ওতে উকুন লাগবে, পোকা ধরবে সুখলাল। এত তোমার টাকার খাকতি, টাকার পোকা নোংরা করবে। সিন্দুর ! নোংরা কীসের ? আসলি চিনা সিন্দুর আছে। তোমার ছেলের বউ ভি ওই সিঁদুর লাগায়। আচ্ছা সিন্দুর। গোবরার বউ দুৰ্গাকে সিঁদুরের গল্পটা সে শোনায় রেশন নিযে এসে। ইতিমধ্যেই হৃদয় পুড়ে যাওয়া জ্বালার সেই পুরাণ ইতিহাস কথকতার ছোঁয়াচ লাগা উদ্দীপনার মুহূর্তে ঘুরিয়ে পেঁচিযে সে যা বলেছিল। আর সুখলাল যে জবাব দিয়েছিল তা অনেকখানি ধাঁধার মতো হয়ে গেছে। লক্ষ্মীর নামে যে অকথা কুকথা কানাঘুষা শোনা যায়। তাই নিয়ে সে কি গাল দিয়েছিল সুখলালকে ? সুখলাল কী জবাব দিয়েছিল যে তার ছেলের বউ দুৰ্গাঁও বজ্জাতিতে কম যায় না ? কে জানে। ও রকম ঘযেমেজে সাবধানে শাপ দিতে গেলে না হয়। জিভের সুখ, না হয় প্রাণের শান্তি। যা মুখে আসে বলে দিলে হয়তো সুখলাল চটে লাল হয়ে যেত, এ বস্তিতে বাস উঠত। তাদের। তবু বোঝা তো যেত। সঠিকভাবে যে একজনকে প্ৰাণ ভরে গাল দিলাম। আর সে প্রাণভরে প্রতিশোধ নিল ! দুর্গার এক ফোটা কৃতজ্ঞতা নেই ! বুড়ি শাউড়ি যে জোগাড়যন্ত্র করে রেশনেব চাল আটা এনে আজ শনি আর কােল রবিবারের পেটপূজার ব্যবস্থা করেছেন যেমন করেই হোক, নইলে এ বেলা থেকেই উপোস শুবু হত, এ সব যেন দুর্গার হিসাবে আসে না। 场 সে বলে, একবার গেছলাম, ফেরা যেতাম। তোমায় এত কাণ্ড করতে কে বলেছে ? ছেলে তোমায় কালীঘাটের ধর্মের ঘট ফেলে * ধর্মঘটের ঘাট মেনেছে। তা বাবা যা করেছে, সে আর দশটা মদপুরুষের সাথে করেছে। বুড়িঘাগি মেয়েমানুষ তুমি, সব তাতে তোমার মাথা গলানো কেন ? আ মরণ, গোবরার মা ভড়কে গিয়ে বলে, রেশনের চাল আটা না আনলে পরবড়ো তুমি পেট চিনেছ ওনার মা !-দুৰ্গা বলে আঁচলের গিট খুলতে খুলতে, সাগগে যাবে। সে ভাবনা নাই, পেটের ভাবনায় মলে। আমি বলে কত করে মাইনের দু টাকা আগাম নিয়ে ঘবে এলাম যে রেশন আনিব, উনি আগে ভাগে সুদে টাকা ধার করেছেন ! তাঁর সয় না ! একটা অতি আধুনিক ছোটাে সাইজের ধাতুব টাকা বাড়িয়ে দিয়ে বলে, টাকা দিয়ে মোর (लाल (न 6ीमt, यi& । আর দু আনা ? সে তুমি দেবে। অত তোমার বাড়াবাড়ি কেন ? সুদের দু আনা অবশ্য দুৰ্গই দেয়। মুখে যা বলার তা যত খুশি বলা যেতে পারে কাজে মানিয়ে না চললে হবে কেন ? গোবরার মা তো কেবল নিজের পেট নয়। তাদের সবার পেটের ভাবনাতেও উতলা হয়েছিল। কয়েক মিনিট জোর বৃষ্টি হয়ে আবার টিপটপ বর্ষণ চলে। মোটে একটা মাস, আষাঢ় মাসটা খেটেই যেন মেঘেরা শ্ৰান্ত হয়ে পড়েছে। ভোরে এমনই এক পশিলা জোরালো বর্ষণের মধ্যেই লক্ষ্মী বস্তা মাথায় চাপিয়ে কাজে বেরিয়েছিল। সুখলালের একটা ছাতি আছে কিন্তু মেয়েরা কি ছাতি মাথায়