পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/৩২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VS8 মানিক রচনাসমগ্র অনন্তের বিরুদ্ধে বিদ্বেষী খেদটা আর ফুটন্ত অবস্থায় নেই। অত বেশি অস্থির হবার জন্য বরং একটু লজ্জাই বোধ হচ্ছে তার। চাদের কঁচা আলোয় পড়ে আছে লাল কঁকারের লম্বা সড়ক। কার গাড়ি ধুলো উড়িয়ে দিয়ে গেছে, নাকে চেনা মেটে গন্ধের মতো লাগছে ধুলোটা। কালীনাথকে এগিয়ে আসতে দেখে তিনজনে বিড়ি লুকিয়ে ফেলে, পাকা ছাড়া। মনের তলা থেকে তার হাতে টান লাগে জুলন্ত বিড়িটা পিছন দিকে সরিয়ে ফেলতে নয়তো ফেলে দিয়ে জুতোর নীচে পিষে ফেলতে। কিন্তু বিড়ি লুকানোটা হবে কালীদাকে ফাঁকি দেবার চেষ্টা। বিড়ি ফুকলেও হবে কালীদাকে অসম্মান করা। তাই রফা সে করে বিড়িটা মুঠিতেই একটু আড়াল করে ধরে রেখে। প্রৌঢ়বিয়সি সম্রাস্তু ভদ্রলোক কালীনাথ নয়, বছর সাতাশ বয়সের যুবক মাত্র, ধুতি আর হাতকটা শার্ট পরা সাদাসিদে বেশ, শক্ত ব্যায়ামী শরীর, ধীর পদক্ষেপ। ছেলেদের কাছে কিন্তু অনেক গুরুজনস্থানীয় সম্রাস্তু ভদ্রলোকের চেয়ে তার শ্রদ্ধা ও সম্মান বেশি। গত আন্দোলনে যোগ দিয়ে মাসিকয়েকের জন্য জেলে গিযেছিল। ফিরে এসে চিরকাৱতীদের টিমে রাজনৈতিক কার্যকলাপ থেকে সরে গিয়ে অন্য কাজে মন দিয়েছে। একটা ব্যায়াম সমিতি করেছে ছেলেদের জন্য, ডনবৈঠক সাঁতার কুস্তি বক্সিং ছোরাখেলা যুযুৎসু সবকিছু শেখানো হয়, চরিত্র গড়া হয়। আর মানানো হয কঠোর ডিসিপ্লিন। অনেক কিশোরের মা-বাবা, ছেলেকে হঠাৎ মেয়ের মতো লাজুক হয়ে উঠে শুকিয়ে চিমসে মেরে যেতে দেখে যারা ভড়কে গিয়েছিল, ছেলে ব্যায়াম সমিতিতে যোগ দেওয়ার পর আবার তাব চোখ-মুখে স্বাস্থের জ্যোতি ফুটতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে। একটা সেবাসংঘের পিছনেও কালীনাথ আছে। গত বন্যায়। এই সংঘেব রিলিফের কাজ দেখে বড়োবাও কালীনাথকে শ্রদ্ধা করতে শিখেছে। শুধু শ্ৰদ্ধা নয়, সকলে একটু ভয়ও করে তাকে। দু-দণ্ড তার সঙ্গে মিশলে মানুষ টের পায়, শুধু তেজি সাহসী ত্যাগী নয়, কাজেব নিষ্ঠায় চরিত্রের দৃঢ়তায্য লোহাব মতো শক্ত নয, কী যেন প্রচণ্ড একটা শক্তি আছে তার মধ্যে, ভয়ংকর আবেগের জমানো বিস্ফোরক। তাকে ঘিষে একটা রহস্যোব আবরণ নামে অনুভূতিগত কল্পনায়। মনে হয, সে বুঝি বিপজ্জনকও বটে। কালীনাথের প্রতি তীব্র আকর্ষণ বোধ করে পাকা। ওর সামনে সে নার্ভাস হয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে তার মধ্যে প্রবল একটা বিদ্রোহের ভাবও জাগে। হঠাৎ অবাধ্যতার অবজ্ঞায় মানুষটাকে ফুট করে উড়িয়ে দিতে প্ৰচণ্ড তাগিদ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তুমি তিনদিন যাওনি প্ৰকাশ, এই ব্যাপারের জন্য কি ? একটু ইতস্তত করে পাকা । ঠিক তা নয়, ভোরে ঘুম ভাঙ্গেনি। ঘুম ভাঙ্গেনি ! এ তো চলবে না পাকা। আমার ক্লাবের ছেলে তুমি, ভোরে তোমার ঘুম ভাঙ্গে না ! কাল আসবে ? কাল ? কাল নয় কালীদা, পরশু। আচ্ছা। কিন্তু তোমার মনে আছে তো এটা তোমার ফাস্ট স্টেজের শেষ মাস ? ঢ়িল দিলে চলবে না। আর। ক্লাবের নিয়ম। কিন্তু ভারী কড়া। দু-পা এগিয়ে মুখ ফিরিয়ে কালীনাথ বলে যায়, তােমায় একটা খবর দি। রাখলের বেশি লাগেনি। হাসপাতালে যাওয়ার কোনো দরকার ছিল না। কানাই বলে, আমারও সন্দা ছিল। ভুবনটা কম ঝানু ! পাচু বলে, কী ব্যাপার, মাইরি ! মোটে লাগেনি রাখালের ? হি হি করে পাঁচু হাসে, পাকা মোদের বিক্সিং শিখছেন, এক ঘুষিতে রাখাল কুপোকাত ! তাই তো বলি । তোকে একটা মারব ?