পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদায়ের ইতিহাস ww. শূন্ধ নীরস একঘেয়ে জীবনের চাপে, মানুষ যত প্ৰাণহীন নিস্তেজ হােক, বিদ্রোহের প্রেরণা তার মরে না। তার সহকমী তিনজন তাই বেতন পাওয়ার পর মাসে একদিন ফুর্তি করে। আর কোনো পথ খুজিয়া পায় না, তাই এই ভীৰু দুর্বল মানুষ তিনটি এইভাবে বিদ্রোহ করে। একঘেয়ে, নিবুপায়, অবসন্ন জীবনযাপনের বিরুদ্ধে, দিনের পর দিন কলের মতো সুবোধ সুশীল ভালো মানুষ হইয়া থাকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ! বিছানা ছাড়িয়া উঠিয়া দাঁড়ানোমাত্র মাথা ঘুরিয়া পড়িয়া যাওয়ার উপক্রম হয়, বইয়ের শেলফটা ধরিয়া ত্রিক্টপ ভাবে, তা হােক। এ দুর্বলতা কিছু নয়। মন তার সবল হইয়াছে। আর কোনো দিন সে হতাশ হইবে না। হতাশা বোধ করিলেও আসিয়া যাইবে না কিছুই, সে শুধু হইয়া থাকিবে হৃদয় মনের একটা বদ অভ্যাস। যতদিন সে পৃথিবীতে বঁচিয়া থাকিবে, তার লড়াইয়ের ক্ষমতা আর কিছুতেই নষ্ট হইবে না। নিজের সমস্ত পাওনা আদায় করার চেষ্টা ছাড়া অন্য কোনো লড়াই কোনো नि ऊाला@ व्लादि मां । নীচে নামিতেই সে সামনে পড়িয়া গেল অবিনাশের। ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে একবার চাহিয়াই নীরবে তিনি সরিয়া গেলেন। রাণু জিজ্ঞাসা করিল, তোমার অসুখ করেছে, মামা ? প্ৰভা খোটা দিয়া বলিল, তুমিও এমনি করে গোল্লায় যাবে, তা আমি আগেই জানতাম। চাকরি বাকরি করে নিজের ভাগনিকে একটা জামা পর্যন্ত যে কিনে দেয় না, মদ না খেলে সে খাবে কী ! অবিনাশ আড়াল হইতে হ্রংকার দিয়া উঠিলেন, চুপ কর প্রভা, জুতিয়ে মুখ ছিড়ে দেব। পাড়াসুন্দু লোককে শুনিয়ে চিপ্লাচ্ছেন মেয়ে, বোকা বজাত কোথাকার ! উনানে কেটলি চাপাইয়া মা রান্নাঘব হইতে বাহির হইয়া আসিলেন। প্ৰথমে প্রভাকে বলিলেন, জামাই তো চুনকালি দিয়েছে মুখে, ভাইয়ের একদিনের বদখেয়ালটা চেপেই। যা না বাছা ? তারপর কঁদো কাদো হইয়া ত্ৰিষ্টপকে বলিলেন, না বাবা, তুই লজ্জা করিস নে। মুখ-হাত ধুয়ে চা খেয়ে ওনার পায়ে ধবে ক্ষমা চেয়ে নিবি যা ! তোর কিছু দোষ ছিল না, পোড়ারমুখো বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে অবিনাশ ইতিমধ্যে আড়াল হইতে সামনে আসিয়াছিলেন, বলিলেন, থাক থাক, ও সব কথা বলে আর কী হবে ? টাকা। যা আছে, দাও তো তিক্ট। সব উড়িযে দাওনি তো ? ত্ৰিষ্টুপ সমস্ত টাকা আনিয়া অবিনাশের হাতে দিল। মোটে গোটা তেরো টাকা কম দেখিয়া অবিনাশ স্বস্তি বোধ করিলেন। কিছুক্ষণ ইতস্তত বরিয়া পাঁচটি টশ ত্ৰিষ্টুপকে ফিরাইয়া দিয়া ত্ৰিষ্টুপ কিছুই বলিল না। বেলা তিনটার পর জামাকাপড় পরিয়া সে বাহির হইয়া গেল। কুন্তলার দিদির বাড়িতে গিয়া সে কিছুক্ষণ কাটাইয়া আসিবে। মনটা কেমন অশাস্ত হইয়া আছে, ও বাড়ির শাস্তিপূর্ণ আবেষ্টনী আর দুটি শাস্ত ও সুখী মানুষের সঙ্গ হয়তো তার মনটাকেও শাস্ত করিয়া দিবে। বাহিরে যাওয়ার আগে ত্ৰিষ্টুপ শুনিয়া গেল মা বলিতেছেন, এত বড়ো সোমািত্ত রোজগেরে ছেলে, কদিন থেকে বলছি, একটা বিয়ে-থা দিয়ে দাও আর অবিনাশ বলিতেছেন, মেয়ে তো খুঁজছি।-- মেয়ে খুজিতেছে, মেয়ে । তার বাপ তার ও দ্য মেয়ে খুজিতেছে । এমন হাস্যকর রকমের অশ্লীল ঠেকিল কথাটা ত্ৰিষ্টুপের কাছে। তার হইয়াছে বয়সকালের রোগ, সে জন্য এই ঔষধ প্রয়োজন। এর বেশি আর কিছু কি ভাবিয়াছে অবিনাশ ? তার মা ? মেয়ে খুঁজিয়া আনিয়া দিলে যথানিয়মেই সে প্রিয়া, সাথি, জননী ও গৃহিণী হইবে, এটা জানা কথা। কিন্তু জানা কথাটাও কি মনে পড়িয়াছে ওদের ? মেয়ে বলিতে যে মানবজাতীয়া জীব বুঝায়, তাও বোধ হয় খেয়ালে আসে নাই। মানিক ৬ষ্ঠ-৩