পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/৪১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ऊंश्लु 8 $ (ሉ একনজরের বেশি তাকায় না পাকাদের দিকে। এমনই তার আশ্চর্য সংযম ! অথবা ? পাকা ভাবে। ঘোষাল তাদের চা খাওয়ায়, চায়ের সঙ্গে লোচন ময়রার বিখ্যাত সন্দেশ। চায়ের সঙ্গে সন্দেশ ছাড়া মানবে কোন ? দেওয়ালের নীচের দিকটা আলকাতারা রং, মাথার ওপরে নিশ্চল পাখা, মেঝের মাঝখানে ভারী মোটা সরকারি টেবিল চেয়ার ছাড়া এতবড়ো ঘরটাতে শুধু বুক্ষ শূন্যতার গান্তীর্য-দেওয়ালে ক্যালেন্ডার পর্যন্ত ঝোলানো নেই। জানােলা দিয়ে চোখে পড়ে কম্পাউন্ডের সদর গেটে পাহারায় ও সশস্ত্ৰ সিপাহির কোমর থেকে ওপরের অংশটা, রাস্তার ওপারে উচু দেয়াল ঘেরা মেটে লাল রঙের জেলের বাড়ির ওপরের দিকটা। কী রকম চেহারা জেলের ভেতরটার ? সাইকেলে, পায়ে হেঁটে কত শতবার জেলটার সামনে দিয়ে যাতায়াত করেছে কিন্তু ভেতরে কী আছে দেখবার সাধ তো কখনও পাকার হয়নি ! নলিনী চুপচাপ বসিয়ে রেখেছিল। দুঘণ্টা, এখানেও ঘণ্টাখানেক কাটল। কি বিশ্ৰী শাস্তশিষ্ট ভদ্রভাবে এ রকম প্রতীক্ষা করা ! জেলটার পেছনে সূৰ্য আড়ালে পড়েছে। আমি ঠিক জানি না। আমি আজ মোটে এসেছি। পাকা জানে এটা মিছে কথা। ঘোষাল এবং আরও অনেককে নিয়ে কলকাতা থেকে কাল ভোরে স্পেশাল ট্রেনের আবির্ভাব তাদেব অজানা নয়। প্রতিমা সবিনয়ে বলে, আমি একটু ইয়েতে যাব। বেশ তো, বেশ তো ! ঘোষাল আদলি ডেকে হুকুম দেয়। আদলির শুধু উর্দি সম্বল, অস্ত্রশস্ত্রের বালাই নেই। দরজার কাছ থেকে তাই আরও একজন প্রতিমার সঙ্গে যায়। সে অস্ত্ৰধাবী। তুমি একটু বসো পাকা । ঘোষালও উঠে যায়। যায় নলিনী দারোগার ঘরে। নলিনী তাড়াক করে উঠে দাঁড়ায়। মেয়েটাকে ছেড়ে দিন। জেরা করে নেবেন, যদি কিছু বলে ফেলে। তবে ছুড়িটুড়িকে ওরা আসল কারবারে টানে না । ইয়েস সার। ছেলেটাকেও ছাড়তে হবে। নলিনী শূন্যদৃষ্টিতে তাকায়। আজ নয়, কাল। যদি না কনফেস করে। ভৈরব চাপ দেবে, ওপরে গিয়ে চাপ দেবে, তালুতে। বুঝলেন ? আসল কাউকে পেলেন না, ওই রেকর্ডে এইটুকু একটা বাচ্চাকে আটকেছেন জানলে ওপর থেকে জুতো আসবে, আস্ত জুতো। বুঝেছেন ? ছোঁড়াটা জানে সার, অনেক খবর জানে। বার করুন খবর। আমি দেখছি চেষ্টা করে। আমায় কিছু না বললে আজ রাতটা পাবেন, আপনারা চেষ্টা করে দেখুন। কাল ওকে ছেড়ে দিতেই হবে। ঘোষালকে এক মুহূর্ত আনমনা দেখায়। মনে হয় কাব্যচিন্তা করছে।--কিন্তু মরে যেন না যায়। বাইরে যেন জখম না হয়। বুঝলেন ? ইয়েস সার। প্রতিমার ডাক পড়ে নলিনীর কাছে। আর সে ফেরে না। ঘোষাল কথা বলে পাকার সঙ্গে, তার ছেলেবেলার কথা, তার মার কথা। সেই পুরনো কথা, আরও বিস্তারিত, রং ছড়ানো-কত নিবিড় স্নেহভরা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল পাকার মার সঙ্গে