পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 Sqo মানিক রচনাসমগ্র এসে তার মুর্থ নোংরা গরিব বাপখুড়ো পিসিমাসি ভাইবোনদের মধ্যে বিনা সমালোচনায় সহজ শ্রদ্ধা সহজ। আনন্দে বাস করা, পাঁচুর নজরকে নতুন ভঙ্গি দিয়েছে। তার কাকা একগুয়ে জ্ঞানদাসের গেয়ে উগ্রতাকে বিদ্রোহের মর্যাদা দিয়ে চিরদিনের জন্য পাচুকে পাকা আত্মমর্যাদার ভিত্তি দিয়ে গেছে। মনে মনে সে কাকার পরম ভক্ত, মাঝখানে শুধু কিছুদিনের জন্য একটা খটকা লেগেছিল। কাকা বুঝি তার শুধু মাথা গরম গোয়ার, দেশও বোঝে না, স্বাধীনতাও বোঝে না, ষাঁড়ের মতো শিং নেড়ে শুধু গুতোতে জানে। পাকা জ্ঞানদাসকে খাঁটি বীরের সম্মান দিয়ে তার মনের সংশয়ের মেঘ কাটিয়ে দিয়ে গেছে। দেশ ও স্বাধীনতা-সংগ্রামের বিখ্যাত কত ভদ্র নেতার সম্পর্কে পাকার সাংঘাতিক অভক্তি আর কটুক্তি পাচুকে চমকে চমকে দিত। সেই পাকা জ্ঞানদাসকে-তার গোয়ার-গোবিন্দ কাকাকেশ্রদ্ধাভক্তি দিয়ে গেছে। পাচুর কি আর সংশয় থাকে ! ঝাড় থেকে বাড়তি বঁাশ কাটা হয়েছে গোটা দশ-বারো। কাল হাটবার, গাড়িতে হাটে বেচিতে পাঠাতে হবে। পাঁচুও হাত লাগিয়েছে। ধারালো দা দিয়ে কাটা বাঁশের কঞ্চি সাফ করতে করতে তার মনে হল একটা কথা। হাটে না পাঠিয়ে তা ? হাট দুকেশ তো ? সদর সাত কোশ। হাট থে বঁাশ লেবে লোচন রসিক না তো খলিমুদীরা। ফের সদরে চালান দেবে, লাভ করবে। তার চেয়ে মোরা যদি ईं ? বসন্তের কাছারি-বাড়ি সংস্কারের জন্য দুটি বাঁশ দিতে হবে, ঘাড়ে করে নিয়ে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসতে হবে। ধনদাস ঠেকনা বাঁশের লাঠি কাটছিল। ডগার সবুদিক থেকে বা শাখা থেকে লাঠির মতো একরকম ঠেকনা নিতে হয়, মাথায় বঁশ বইতে হলে, দম ফুরিয়ে গেলে একটু থেমে জিরোবার সময় মাথার বদলে এই ঠেকনা লাঠিতে দিতে হয় বাঁশের ভার। দুটি বাড়তি সবুজ বাঁশের ওজন কত সে-ই জানে যে বাঁশের জোড়া মাথায় চাপিয়ে বয়। পুষ্ট মোটা তিনটি বাঁশ বইবার সাধ্য জোয়ান মদেরও হয় না। দম ফেটে যাবে, ঘাড় বেঁকে যাবে। হাট-বাজারে মাথায় যারা বঁাশ বয়ে নেয়, দুটির বেশি বঁশি বড়ো দেখা যায় না। ( प्रज्ञ (कान् ? তা কে জানে ! পাঁচুকে মানতে হয়, তবে কিনা হাট থে। কিনে সদরে তো চালান দেয়। মোরা যদি সদরে যাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করে না। ধনদাস আর জ্ঞানদাস। একজন বঁাশ-ঝাড়টার দিকে, আর একজন বাতাবি লেবু গাছের বাড়তি রাংলােগা ফলটার দিকে দু-চারক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তারাই খরচ করে পাচুকে সদর স্কুলে পড়িছে, তারাই যদি এখন পাচুর মতামতকে যথেষ্ট পরিমাণ মর্যাদা না দেয় তা হলে চলবে কেন । কথাটা মন্দ নয়। জ্ঞানদাস প্রথম সায় দেয়। কী মৃদু। তার কথা, স্নেহ-শ্রদ্ধা, মায়া-মমতায় কী স্নিগ্ধ সুমিষ্ট তার উচ্চারণ ! এই জ্ঞানদাস নাকি জমিদার বসন্তের প্রাপ্য খাতির দেয় না, বেকার খাটতে ডাকলে কর্কশ। জবাব দেয়, বসস্তের লেঠেলের মাথা ফাটিয়ে রক্তপাত করে। ধনদাস শুধু বলে, তা দেখি একবার। তোমরা বলছি। সেদিন তারা সপরিবারে এই নতুন প্রচেষ্টার রোমাঞ্চ ভোগ করে। বড়ো একটা শোল মাছ ধরে ঝাল রান্না হয়। মাছটা ধরে আনে পিসি সুভদ্ৰা। পরের পুকুরে দুবছর ধরে পোষা মাছ, এমনই দরকারের জন্যই বুঝি সুভদ্ৰা এটােকাটা ভাতের কণা কুড়িয়ে দুবছর প্রতিদিন দুপুরে খাওয়ার পর