পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/৪৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8so কানাই লম্বা, কালো, রোগ, কম কথা কয়, কৌতুকবোধটা চোখা, সব সময় সব কিছুতে এমন হাসি হাসি মুখ করে থাকে যেন মজা লাগছে। తిరిఆ বন্ধুত্বের কুঁড়ি জন্মে। ফুল ফুটে ফল পাকতে তাদের মাসখানেকও লাগেনি। श्रृं ७०१ এখানে ওখানে ভুর করে ছড়ানো পুরাণো সহরের প্রাচীনতাই যেন এগুলি। श्रृं ७०१ ছোট একটি রাস্তার ভেতরে ধনেশের দোকান। এই রাস্তার ও মাথার দিকে সরু একটা গুলির মোড়ে পাকাকে ছেলেবেলা কুকুর কামড়েছিল। মার সঙ্গে বেড়াতে এসেছিল মামাবাড়ী। বাড়ীর কাছে মুড়িওয়ালী কালীদাসী, ভাব হয়েছিল তার মেয়ের সঙ্গে। তার চেহারাটি আজও স্মৃতিতে স্পষ্ট আঁকা হয়ে আছে। একদিন মেয়েটাকে সঙ্গে নিয়ে গজা কিনতে এসেছিল। এই রাস্তারই আরও ওদিকের বুড়ো ময়রাটার দোকানে। দোকানটা আজও আছে, বুড়ো ময়রা আরও বুড়ো, আরও বঁকা অন্ধ হয়ে গেছে, দোকান চালায় তার অদ্ভুত রকম মোটা ছেলেটা। ফিরবার সময় উই ধরা মোটা কালো কাঠের থামওয়ালা জীর্ন পুরাণো বাড়ীটার সদর রোয়াক থেকে তেড়ে এলো থ্যাবড়ামুখো প্ৰকাণ্ড বুড়ো মোটা কুকুরটা। পরিষ্কার মনে আছে কুকুরটাকে, ছেতলা-পড়া দাঁতগুলি পর্যন্ত। মুড়িওয়ালীর মেয়েটাকে পিছনে আড়াল করে সে দুহাতে ঠেকাতে গিয়েছিল কুকুরটাকে, ঠোঙ্গার গজাগুলিরও মায়া করেনি। কোথায় গেছে কি হয়েছে ওদের খোেজ নেবার কথা তো মনেও হয়নি একবার } শুধু ওরা কেন, কারো কি খোঁজ-খবর নিতে মনে থাকে তার ? এই সেদিন ঢাকা থেকে এল, সেখানকার খোঁজ সে নিয়েছে ? এটা বড় অন্যায় হয়ে গেছে। এখানে এসে থেকে দেড়বছরের মধ্যে ঢাকার কারো কাছে একখানা চিঠি লেখা হয়নি। সতীশ, নুরুল, সদাগরের কাছেও নয়, রাঙা বৌদির কাছেও নয়, মীনার কাছেও নয়। চান্দমাবিশ্বকে টাকা পাঁচটাও পাঠানো হয়নি। ফুলকে একটা ডুড়ে শাড়ী কিনে দেবার টাকা। মীনাকে চিঠি না লেখা বোধ হয় ভালেই হয়েছে। সদর হাকিমের ফিটফাট ফাজিল মেয়ে, ওর কি আর মনেও আছে কে একদিন তার সঙ্গে, একসাথে গলা মিলিয়ে গান গাইত ; বাঁশী বাজােত তার গানের সঙ্গে ? বন্ধুদের কাছে লেখা উচিত ছিল। ফুলের জন্য টাকাটা পাঠানো উচিত ছিল। স্কুল ফাঁকি দিয়ে চাদ মাঝির নৌকায় মানিক রচনাসমগ্ৰ কানাই। লম্বা, কালো, রোগী। কম কথা কয় মা রচনাসমগ্ৰ-৬ পৃ. ৩২৫ বন্ধুত্ব জমাট বাঁধতে তাদের মাসখানেকও লাগেনি। মা রচনাসমগ্ৰ-৬ পৃ. ৩২৫ শহরের প্রাচীনতাই যেন এভাবে স্তুপাকার হয়ে স্থানে স্থানে পড়ে আছে। মা রচনাসমগ্র-৬ পৃ ৩২৫ ধনেশের বাড়ির দেয়াল কঁকার-মেশানো মাটির, পাথরের মতো শক্ত, ছাত টিনের। সামনের বারান্দা ঘিরে একাংশ মুদির দোকান করা হয়েছে। মুদিখানার। এদিকেব অংশটা ফাঁকা, শুধু পুরানো ভারী তক্তাপোশ পাতা আছে। তিনু তাড়াতাড়ি পাটি বিছিয়ে দেয়। খুঁকোতে জল বদলে রান্নাঘরের আখা থেকে জ্বলন্ত কয়লা দিয়ে তামাক সোজে আনে। খুঁকোটা নতুন, তাদের ব্যবহারের জন্যই তোলা থাকে। ধনেশ নিজেই দোকান থেকে খুঁকোটা দিয়েছে। তাদের জন্য। দুদিন বাদে তিনু ম্যাট্রিক দেবে, পাকাব মতো উচুঘরের ছেলেরা তার বন্ধু, গর্বে ধনেশের বুক আজকাল দশ হােত হয়ে থাকে। পাক তামাক টেনে চলেছে একমনে, ভাবে বিভোব হয়ে। কালি-পড়া লণ্ঠনটার মৃদু লালচে আলোয় মনে হয়, সে যেন এখানে নেই, হাবিয়ে গেছে। একই ফুকে দিবি নাকি ? কানাই বলে শেষ পর্যন্ত। পাক চমকে ওঠে। আজি চটে না, লজ্জা পেয়ে ফুকোটা বাড়িয়ে দেয়। তিনু জানায় যে অনেকটা তামাক দিয়েছে, সহজে ফুরোবে না। ফুরোলে আর এক ছিলিম সেজে আনবে, সামান্য তামাক তো ? কী ভাবা হচ্ছিল ভাবুকমশায়েব ? নরেশ বলে খানিকটা বিরক্তির সঙ্গে । তা দিয়ে দরকার কী বাবুমশায়ের ? পাকা বলে মুখ বঁকিয়ে। কি ছোটোলোকের মতো তামাক টানা । শেষ করে যাই চল । আমরা ছোটোলোক ; তামাক টানি। তুই যা নরেশ। নরেশ সরকারি ডাক্তার ধরণী, গোস্বামীর ছেলে। মা রচনাসমগ্র-৬ পৃ. ৩২৫-৩২৬