পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“ላo মানিক রচনাসমগ্র প্রতিমারা যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। সমস্ত বাড়িতে থমথম করছে জমজমাট বিষাদ । মিনতির কথায় শুধু হতাশা, দুর্ভাবনা, ভয়। বেলা তিনটে চারটে পর্যন্ত এ বাড়িতে থাকবে ভেবেছিল, প্রতিমা, আধঘণ্টার মধ্যে বিদায় নিয়ে রাস্তায় নেমে সে হাঁপা ছাড়ে। সুধার কাছে যাবার ইচ্ছােটা অনেকখানি উপে গিয়েছে। সেখানে গিয়েও যদি একটু হাসি আনন্দের বদলে এমনি বিব্রত সংকটাপন্ন মানুষের হতাশার কাহিনি শুনতে হয় ? শুনতে হবে কি হবে না জানিবার তাগিদটাই যেন তাকে ঠেলে নিয়ে গিয়ে ট্রামে উঠিয়ে দেয়। সুধা থাকে শহরের আরও উত্তরে, স্বামীর সঙ্গে ভাড়াটে বাড়িতে। মিনতির অনেক আগেই সুধার বিয়ে হয়েছিল, তার তিনটি ছেলেমেয়ে, গত বছরখানেকের মধ্যে সংখ্যাটা যদি আর না বেড়ে থাকে। ধীরেন নিজেই দরজা খুলে দেয়। বাড়িটা শূন্য, নিঝুম মনে হয় প্রতিমার। সবাইকে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছি ও মাসে। शां६ १ ধীরেন এক মুহূর্ত চুপ করে থাকে। বোধ হয় তার মনে পড়ে এই মেয়েটি সুধার প্ৰিয়তমা সখী, তার সঙ্গেও এর পরিচয় আত্মীয়তার মতো ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। ব্যাপার হল কী, একটা বড়ো বিপদে পড়ে গেলাম। আপিসে হঠাৎ ডিগ্ৰেড করে দিলে, মাইনে প্ৰায় অর্ধেক হয়ে গেল। আমার কাজের দোষ দেখালে কতগুলি, কিন্তু আসল কথা হল। লড়াই থেমে গেছে, একটা ছুতো করে মাইনে কমিয়ে দিল। রিজাইন দিই তো দেব, ওই মাইনেতে অন্য লোক নেবে। ভেবেছিলাম রিজাইন দেব, কিন্তু ধীরেন একটু হাসে। কবুণ নয়, মর্মস্তিক জ্বালা ভরা হাসি। দেখলাম, ও টাকায় বাসা করে থাকা যায় না, অগত্যা সবাইকে পাঠিয়ে দিলাম দেশে। আগাম ভাড়া দেওয়া আছে বাড়িটার, নিজে তাই এ মাসটা আছি। আপিস যাননি ? আজ ছুটি। বড়ো মালিক মশায় কাল নরকে গেলেন, তঁর সম্মানে ছোটাে মালিক মশায় আজ ছুটি দিয়েছেন। মাথা ঘুরছিল প্রতিমার ! আপিসে পার্টিশনের ছোটাে ঘুপচিটির মধ্যে নিজের অভ্যস্ত চেয়ারটির জন্য মন তার উতলা হয়ে ওঠে, ওইখানে সে যেন আড়াল হতে পারবে জগৎ থেকে, কিছুক্ষণের জন্য दिंडी श्रोत्र । প্রতিমা সোজা আপিসে চলে যায়। বাড়িতে দীনেশের অসুখের জন্য দেড়টার সময় আপিসে আসার কৈফিয়ত উপরওলা বিশ্বাস করে, আপিস ফাকি দেবার স্বভাব প্ৰতিমার নয়। সারাদিনের শ্রাস্তি প্রতিমাকে কাবু করতে পারে না, আপিস থেকে ফিরবার সময় শ্ৰাস্তিতে বরং তার দেহমান শাস্ত হয়ে যায়। উদার ক্ষমাশীল হয়ে ওঠে মনটা। ক্ষমা অবশ্য সে করে না চকীদের, যাদের চক্রাস্ত জীবনটা তার দুঃখের তাণ্ডবে পরিণত করেছে, কিন্তু নিজের মর্মের শিরা ছিড়ে ছিড়ে অর্থহীন ভাবপ্রবণতার আত্মরতিকে এখন সে প্রশ্রয় দেয় না। তার নিজের জীবনের সমস্যা ও ব্যর্থতা বৃহৎ ও ব্যাপক হয়ে ছড়িয়ে যায় অসংখ্য জীবনে, নিজেকে ভুলে সে ভাবতে থাকে অন্য সংখ্যাহীন মানুষের কথা। বাড়ির সদরের চৌকাঠ পার হবার সময় আহ্বাব্দীর ছেলের কান্না শুনতে পায় না। আজ। প্রতিমা আশ্চর্য হয়, ভাবনায় পড়ে যায়। আহুদী তাহলে আজ কামাই করেছে, কাজে ফাকি দিয়েছে। বাসন মাজা, ঘর বঁটি দেওয়া, উনুন ধরানোর কাজগুলি হয়তো এখনও স্থগিত রেখেছে বাড়ির লোক আহ্বাব্দীর