পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র সপ্তম খণ্ড.pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(Pipsf SeS বৃষ্টি যদি হয়, ঠান্ড যদি পড়ে, যন্ত্রণাটা কি তার বাড়বে ? যে যন্ত্রণাই হােক, শরীরের ঠান্ডা লেগে যন্ত্রণা বেড়ে যায়, এইটুকু ছায়া জানে। ঘুপচি রান্নাঘরের বদ্ধ হওয়ায় তার দম আটকে আসে, মাথা বিমঝিম করে, কিন্তু কদিনের এই অসহ্য যন্ত্রণাটা যেন সত্যই একটু কম পড়ে। উনানোিব আঁচ व्लां१ॉल ! মেয়েমানুষের কানো ব্যথা ! পেটে নয়, কানো ! বাচ্চা কাচ্চ নয়, জোয়ান বয়সি এক বিয়ানি মেয়েমানুষ, তার কানে ব্যথা। বাচ্চাদের কানে আর পেটে ব্যথা হয়, সেটা সবাই জানে, কিন্তু এই বয়সে কান ব্যথা ! সীতাংশু বলে, ময়লা জমেছে কানে। মাঝে মাঝে তেল দিতে পার না কানে দু-একফেঁটা ? না, কানটা তেলে চকচক করলে বৃপের হানি হবে ? তেল দিয়ে বাইরেটা সাবান দিয়ে ঘষে সাফ করে নিলেই হয়। দুদিনে একটা করে সাবান তো ফুরোচ্ছ,-লাটসায়েবের বাড়ি যেন ! কানের অসহ্য ব্যথার কথা এসে ঠেকে সাবানের খবচে । আমি এক সাবান খরচ করি ? মুখে হাতে একটু মাখি তো মাখি, নইলে নয়। আমায় দায়ি করো কেন ? আমি একাই যেন তোমায়। ফতুর করলাম ! বিয়ে করা বউকে লোকে কত কী দেয়, গায়ে ঘাষবার সাবান জোটে না আমার। আর তুমি যে ওদিকে জানি, জানি জানি। নিজের রোজগারের দু-চারটে টাকা নিজের জন্য খরচ করি বলে বজাত दछनछि। খঃসংণের পাঁজা তুলতে গিয়ে উচু হতেই কানটা যেন ঝনঝনিয়ে বেড়ে ওঠে মহাসমারোহময় যন্ত্রণার ব্যান্ড বাজনার মতো ! বাসনগুলি তুলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ছায়া ভাবে, ছুরি দিয়ে হােক, ক্ষুর দিয়ে হােক, কানটা কেটে ছেটে ফেলতে পারার উপায় জানলে বোধ হয় ক্ষুর দিয়ে গলাটা কেটে বা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করার ইচ্ছাটা এমন জোরালো হত না। স্যাতসেঁতে উঠানে চলতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে মাথাটা কী তার ফেটে যাবে না—এমন ভাবে ফেটে যাবে না যাতে সঙ্গে সঙ্গে তার মরণ হয় ? আমি বলে মরে যাচ্ছি। কনের ব্যথায়-ক-দিন বারবার কেন যে সে নিরর্থক সীতাংশুকে এ কথা শোনাতে গিয়েছে। সকালে বিকালে ! তার বদলে নিজেই কোনো একটা ব্যবস্থা করলে হয়তো সে রেহাই পেত। এই অসহ্য যন্ত্রণা থেকে। কিন্তু হায়, কী ব্যবস্থা করা দরকার তাই যে সে জানে না ! তার শক্ত কোনো ব্যাবাম হলে সীতাংশু যে ব্যস্ত হয়। •, তা নয়, কিন্তু কান ব্যথার কথাটা সে কানেও তোলে না ! সরষের তেল গরম করে দিয়ো সেরে যাবে। একটু সেঁক দিযো। কান ব্যথা ! কান ব্যথাটাই তোমার বড়ো হল ? শাশুড়িও তাই বলে, গরম দুফোটা তেল দাও কনে, সেঁক দাও একটু, সেরে যাবে। কান ব্যথা কায় না হয় বাছা ? এমন তো করে না কেউ ! ননদ খুকুর বিয়ের চেষ্টা চলছে তিন-চারবছর, প্ৰাণটা তার রসে টইটুম্বুর, সব কিছুর একটিমাত্র মানে সে জানে। সে বলে, আসল কথাটা বলো না বড়দি ? বলো, তোমার পায়ে পড়ি। বলতে হবে আমায়। কান ব্যথার মানেটা কী ? আলােসমি লাগছে ? গা গুলোচ্ছে, বমি আসছে, শূয়ে থাকতে চাও ? তাই বলে না কেন, সোজা কথা সোজা ভাষায় ! আর কাউকে না বলো, আমায় বলো । কান ব্যথার ছল করতে হবে না, আমি সব ঠিক করে দেব। তোমায় রাঁধতে হবে না, বাসন মাজতে হবে। না, কোনো কাজ করতে হবে না, শুয়ে শুয়ে হাই তুলবে, আর উঠান-চোঙ্গার আকাশটুকুর মতো মেঘলা হয়ে আসে খুকুর মুখ, যার ভালো নাম অপরাজিতা, করুণ সুরে সে বলে, কেমন লাগে বউদি ? বলো না আমায়। বলতে হবে, বলতে হবে তোমায়।