পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র সপ্তম খণ্ড.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সোনার চেয়ে দামি > 、 জবাব আসে ঘড়ি ঠিক নেই। এই বেঠিক ঘড়ি ধরেই ঠিক সময়ে সঞ্জাব কিন্তু আপিস যায়, রেডিয়ো চালায়। পিয়ন যাকে সামনে পায় তার হাতেই দু-ঘরের চিঠি দেয়। তাদের চিঠি সঞ্জীব বা আশার হাতে দিলে পিয়নকে ফিরিয়ে দেয়, বলে, আমাদের চিঠি নয়। বলে ঘরে চলে যায় । সঞ্জীব আপিস গেলে আশা ঘরে তালা দিয়ে রান্নাঘরে যায়-দশ মিনিটের জন্য নাইতে গেলেও ঘরের দরজায় তালা পড়ে ! পাশেই আছে সস্ত্রীক এক বেকার ! তবু আশার কাছেই সাধনা আধিকাপ চিনি ধার করেছিল। কী করে করেছিল কে জানে ? আশা গয়না পরে কম। হাতে দু-গাছা করে চুড়ি আর গলায় একটি হার। ভালো ভালো রঙিন শাড়ি ছাড়া তার সাধারণ কাপড় একখানাও নেই, তার বাড়িতে ব্যবহারের জামাও বিশেষ ধরনে ছাঁটা। খোঁপা সে বঁধে না, কিন্তু পাকানো চুলের যে দলটি ঘাড়ের কাছে ঝোলে খোপার চেয়ে তার বাঁধন শক্ত মনে হয়-সাধনা তো কখনও খসতে দ্যাখেনি। বাড়িতে সব সময়ে সে স্যান্ডেল পায়ে দেয়। তাকে দেখলেই টের পাওয়া যায়। গয়না তার যথেষ্টই আছে কিন্তু বেশি গয়না গায়ে রাখা সে BDDDL SLL BD DBSS নটার আগেই সঞ্জীব নাইতে যায়। ফরসা রোগা মানুষটা অত্যন্ত নিরীহ গোবেচারির মতো দেখতে। উঠানটুকু পার হবার সময় পলকের জন্য সে একবার সাধনার রান্নার জায়গাটুকুর দিকে তাকায়। সঙ্গে সঙ্গে মাথা নিচু করে। হঠাৎ কী মনে হয়। সাধনার, ছেলেকে কোলে নিয়ে একটা চায়ের কাপ হাতে করে সে যায় বাসষ্ঠীর কাছে। বলে, আধকাপ চিনি ধার দেবেন ? ধার দেব না। আধিকাপ চিনি আবার ধার দেব কী রকম ভাই ? আজকাল চিনি কি এমনি নেওয়া যায়, না দেওয়া যায় ? বাসন্তী কাপট ভর্তি করে চিনি এনে দিয়ে হেসে বলে, এখন আমার বাড়তি আছে। আমার যখন দরকার হবে, আমিও গিয়ে খানিকটা চেয়ে আনিব । সাধনা কয়েক মুহুর্ত স্তব্ধ হয়ে থাকে। আশার কাছে আধকাপ চিনি ধার নেওয়ার ধাক্কায় এই সহজ আদান-প্ৰদানের সম্পর্কটা সে ভুলতে বসেছিল ? ফিরে গিয়ে আধিকাপ চিনি নিয়ে সাধনা আশার রান্নাঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কাপট নামিয়ে রেখে বলে, আপনার চিনিটা দিদি। সঞ্জীব তাড়াতাড়ি নাওয়া সেরে ইতিমধ্যে খেতে বসেছিল। সে মুখ তুলেও চায না। সাধনা বলে, আপনার আপিসটা কোথায় ? সঞ্জীব বলে, ক্লাইভ স্ট্রিটে। এখা," কি ক্লাইভ স্ট্রিট আছে ? নতুন কী নাম হয়েছে না ? গায়ের জোরে সাধনা যেন ওদের উদাসীনতাকে উপেক্ষা করে আশাকে পর্যস্ত ডিঙিয়ে একেবারে সঞ্জীবের সঙ্গে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আলাপ করবে ! ভাব করলেই বেকার তারা অনুগ্রহ চেয়ে বসবে ভেবে তোমাদের যতই মিছে আতঙ্ক ‘মাক, সে যেন তা গ্রাহ্য করবে না ! চিনিটা ঢেলে রেখে আশা খালি কাপটা এগিয়ে দেয়। তবু নড়ে না। সাধনা। সত্যবাবুর কাছে টাকা পেযে রেশন আর তরকারি আনলে তবে তার আজ রান্নাবান্নার হাঙ্গামী। সামনে মানুষ থাকতে কেন সে অবসরের সময় দুটাে কথা কইবে না ? আশা তাকে বসতে বলে না। বিব্রত সঞ্জীব খাওয়া শেষ করে উঠবার সময় হঠাৎ বলে, আপনি বসূন ? মানিক ৭ম-৯