পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র সপ্তম খণ্ড.pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8V মানিক রচনাসমগ্ৰ এটা রাগের কথা রাখালের । বাড়ি ফেরার পথে রাখালেরও মনে হয়, তার কথায় একটা ফাকি আছে। সত্যই সে কি বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে। সাধনাকে যে তাকে আর তার সস্তানকে বঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আর তার একার নেই ? এ জন্য নেই যে এটা তার অসাধ্য হয়ে গেছে। এমনি আজ দুরবস্থা দেশের ? না, আন্তরিকভাবে বাস্তব উপায়ে এ চেষ্টা সে কোনোদিন করেনি। কথাই শুধু বলেছে নানারকম। দেশবিদেশের কথা শুনিয়েছে সাধনাকে, দেশের আজ কেন এমন ভয়ংকর অবস্থা সেটা ব্যাখ্যা করেছে অনেকটা নিজের বেকারত্বের সাফাই হিসাবে। বুঝিয়ে দিতে চেয়েছে যে নিজের দোষে সে বেকার নয়, সাধনা যে কষ্ট পাচ্ছে সেটা তার অপরাধ নয়, দেশের মানুষ যাদের বিশ্বাস করেছিল, যারা সত্যিকাবের মুক্তি এনে দেবে ভেবেছিল, এটা তাদের বিশ্বাসঘাতকতার ফল । বেঁচে থাকার ও বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব সে ভাগাভাগি করতে চায়নি। সাধনার সঙ্গে। যেভাবে পারে একা সে ভরণ-পোষণ করবে তাকে আর তার আগামী সন্তানদের, নীড় বেঁধে নিয়ে রক্ষা করবে: নেই নীড়, বিয়ের এই চুক্তিটা নিজেই সে পালন কবতে চেয়েছে প্ৰাণপণে ! অক্ষমতার জন্য তাই অবস্থার অজুহাত দিয়ে, নিজের নির্দেষিতার কৈফিয়ত দিয়ে শুধু মান বাঁচাতে চেয়েছে সাধনার কাছে। আসলে আজও তার মন মজে রয়েছে আগের দিনের ফেলে আসা জীবনধারাব রসে। চাকরি করে দুটাে পয়সা এনে ছোটাে একটা ঘর বেঁধে সীমাবদ্ধ জীবনের ছোটােখাটো সুখ-দুঃখ নিয়ে দিন কাটাবার অভ্যাসে আজও নেশার মতো তাকে টেনেছে, আজও সে জের টেনে চলতে চায় উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সেই অভ্যাসের ! জানে যে জগৎ পালটে যাচ্ছে, তাদের ঘর-সংসার ভেঙে দিচ্ছে সেই পরিবর্তনের অঙ্গ হিসাবে, শেষ হয়ে আসছে তাদের মতো মানুষের পুরানো ধাঁচেব জীবনযাত্রা। আর ফিরে আসবে না। তাদের আগেকার জীবন। তবু, জেনেও এখনও সে অাঁকড়ে থাকতে চায় সেই জীবনকেই, যেটুকু আজও বজায বাখা যায় সেইটুকু দিয়েই আজও মন ভুলাতে চায় নিজের যে এখনও টিকে আছি, টিকিয়ে রেখেছি পারিবারিক জীবন। নিজে একা একটু অংশ নিয়েছে সকলের দুরবস্থার সত্যিকারের চেষ্টায়, নতুন করে সব গড়ার লড়াযে । এটুকু করেই সস্তুষ্ট থেকেছে৷ বাসে উঠে দেখা হল বেলার স্বামী ধীরেনের সঙ্গে । বেলা সাধনার ছেলেবেলার বন্ধু। সেই সূত্রে রাখাল ও ধীরেনের পরিচয় যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ হলেও বোঝাই বাসে কথা হয় না। প্ৰভা আজি না পড়ায় রাখাল সকাল সকাল ছুটি পেয়েছে, বাসে এখন যাত্রীদের গাদাগাদি। পুরো টাইম পড়িয়ে রাখাল যেদিন বাসে ওঠে সেদিনও অবশ্য কিছুটা পথ তাকে দাঁড়িয়েই থাকতে হয়। শহরতলির কাছাকাছি গিয়ে ধীরেনের পাশেই বসতে পায়। বলে, খবর কী ? সেই এক খবর।