পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র সপ্তম খণ্ড.pdf/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sobr মানিক রচনাসমগ্র খাটি শহর এলাকায় ট্রাম-চলা বাস-চলা রাস্তার ধারে ছিল রাজীবের আগের দোকান-আগের সেই বজাত পার্টনার দীননাথের সঙ্গে। সে দোকান গেছে যাক, রাজীবের এখন আর আপশোশ নেই। কী বোকাই তাকে বানিয়েছিল হারামজাদা ! সাধারণ দোকানদার সে, পাইকারি কিনে খুচরো বেচার সাধারণ ব্যাবসায়ী, তাকে উচুদরের ব্যাবসায়ী করার লোভ দেখিয়ে, বড়োবাজার থেকে মাল কেনার বদলে বড়োবাজার যেখান থেকে যেভাবে মাল কিনে আনে। সেখান থেকে সেইভাবে মাল আনিয়ে ব্যাবসা ফ্যাপানোর ভাওতা দিয়ে, ঘুষ দিয়ে জোগাড় করা কয়েকটা ওয়াগনের সরকারি পারমিট দেখিয়ে, একজন মন্ত্রীমশায়ের একজন ভাগনেকে দোকানে মহাসমাদরে চা বিস্কুট খাইয়ে, কীভাবেই না মাথাটা গুলিয়ে দিয়েছিল তার। তারপরেই সর্বনাশ হয়ে যেত, একেবারে শ্ৰীঘরে গিয়ে বাস করতে হত, যদি না বাসন্তী গায়ের সব গয়না খুলে দিত, ট্রামকে তার বিয়ের বেনারসির নীচে লুকানো নোট কঁচা টাকা আর ভাঙা গয়নার সোনায় হাজার পাঁচেক টাকা বার করে দিত । কত জন্ম তপস্যা করে না জানি সে এমন বউ পেয়েছে, এমনি চরম বিপদ থেকে তাকে উদ্ধার করার জন্য যে পাঁচ-ছ বছর ধরে কেঁদেকেটে ঝগড়া করে নতুন গয়না আদায় করেছে, খটে খুঁটে নোট লোকে তাকে স্ত্রৈণ বলে। ভাগ্যে সে ন্ত্রৈণ হয়েছিল ! এবার থেকে আরও সে পোষ মানবে বাসষ্ঠীর } নতুন পার্টনার নিয়ে শুধু বাস-চলা রাস্তায় তিন হাত চওড়া দশ হাত গভীর একটা খোপরে সে নতুন দোকান খুলেছে। মস্ত বড়ো এলাকার বাজারটার কাছাকাছি। বাড়ি কাছে হয়েছে দুজনের। চার পয়সা বাস-ভাড়া লাগে। রাখাল মাঝে মাঝে ব্যাবসায় বুদ্ধির পরিচয়ও দেয়। সেটা আসলে অবশ্য তার বাস্তববুদ্ধি। পাঁচশো সিগারেটের মোড়ক কিনতে আসে একজন খদের। দেখেই বোঝা যায় সে পানবিড়ির দোকানি নয়, খুচরো বেচার জন্য পাইকিরি সিগারেট কিনছে না। তার বেশভূষা আর চেহারাটাই সাংস্কৃতিক। বয়স হয়েছে, চুলে পাক ধবেছে, দাঁতে ভাঙন ধরেছে, মুখের চামড়ায় ছাইবৰ্ণ নেমে এসেছে-কালো মেয়ের মুখে একগাদা সস্তা পাউডার মেখে তেলচিটে গামছা দিয়ে ঘষে তুলে দেবার মতো, তবু চােখে যেন জুলছে অতৃপ্ত যৌবনের অগ্নিশিখা, যে ভুখা কোনোদিন মেটে না তাকেই বাড়িয়ে যাওয়ার তপস্যার জ্বালা। আসুন বামাচরণবাবু, আসুন। ভালো আছেন তো ? অনেকদিন বাদে এলেন। এ নতুন দোকানেও আপনি আসবেন রাজীব যেন ভাষা খুঁজে পায় না বিনয় জানাবার, নিজে উঠে দাঁড়িয়ে তার আসনে বসায় বামাচরণকে, দোকানের খেরো বঁধানো হিসাবের খাতাপত্রের তলায় আড়াল করা বহু ব্যবহারে জীর্ণ পুরাতন একটি ছাপা বই টেনে বার করে সামনে ধরে বলে, আজও মাঝে মাঝে আপনার কবিতার বইটা পড়ি আজ্ঞে ! কবিতা লিখেছেন বটে সত্যি ! রামায়ণ পড়ি মহাভারত পড়ি, প্ৰাণটা যেন ঠান্ডা হয়ে না পড়ে। তখন আপনার বইটা পড়ি। বামাচরণ মৃদু মৃদু হাসে। রাজীবের দেওয়া সিগারেটটা ধরায়। রাজীব বলে, আর লিখলেন না ? বারো-চোদেবছর আগে লিখেছিলেন এ বইটা, আর द्विक्लन् न ?