পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র সপ্তম খণ্ড.pdf/২১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sobr মানিক রচনাসমগ্র লাখের বেশি নেই ? সাধনা সোজা তার দিকে তাকিয়ে বলে, কী আশ্চর্য দাখো, আমি জানতাম তোমার এ ক্টোক আসবে !! খুব যখন টানাটানি চলছিল, তখন মনে হয়েছিল কথাটা। টাকার জন্য ভীষণ কষ্ট পেলে, এরপর তোমার রেখ চাপবে টাকা করার। তাই সত্যিা হল। আমি কিন্তু মোটে দু-চারমাস এ সব ভাবছি। রাজীবের সঙ্গে কারবারে না নামলে হয়তো কোনোরকমে দিন চালাবার চিন্তাই করতাম । এ ঝোক তোমার আসতই। একটু সামলে নেবার অপেক্ষায় ছিলে। তুমি চাও না। টাকা ? চাই ! গয়না পবব না। পরব জানি না, চারবেলা ভোজ খাব আর দুঘণ্টা অন্তর নতুন নতুন কাপড় পরব ! টাকার চিস্তার চেয়ে টাকা করার চিন্তায় রাখাল আজ কম মশগুল নয়। টিউশনি, ফালতু রোজগার আর চাকরির ধান্ধীয় ঘুরে বেড়ানোর চেয়ে সময়ও তার এখন কম যায় না। টাকা করায় চেষ্টায । একটা ব্যাপার বড়োই অদ্ভুত ঠেকে তার কাছে। আজ আরও বেশি টাকা করার নেশায় মেতে থাকার সঙ্গে আগের দিনের সেই দিবারাত্রি টাকার ভাবনা আর ছেলে পড়িয়ে চাকরি খুঁজে বেড়াবার ধান্ধায় মেতে থাকার মধ্যে সে যেন একটা সামঞ্জস্য খুঁজে পায় ! টাকাব্য অভাবে কষ্ট পাওযাটুকু বাদ দিলেই যেন মিলে যায় নেশােটা। সেদিন টাকার চিস্তায় ডুবে থাকত নিরূপায় হযে, আজ স্বেচ্ছায় টাকার চিস্তায় ডুবে আছে ! টাকার চিস্তা ছাড়া একদণ্ড শান্তি নেই! তবু, চারদিকের মানুষের সঙ্গে তার যোগাযোগ বেড়ে গেছে। নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে তো পরিচয় ঘটছেই ব্যাবসা সূত্রে, জানাচেনা যাদের সঙ্গে সম্পর্ক একরকমু উঠে গিয়েছিল তাদের সঙ্গেও আজকাল মাঝে মাঝে দেখা হয়, পাড়ার লোকের সঙ্গে চলে মেলামেশা আর মনে প্ৰাণে উদাসীন হয়ে থাকার বদলে স্বেচ্ছায় তাদের ভালেমদের খবর রাখা । সাধনা যেমন জমিয়ে তুলেছে পাড়ায় মেয়েদের সঙ্গে সেরকম মেলামেশা নয়। বাড়ি বাড়ি ঘুরে বসে বসে গল্প জমিযে মানুষের সঙ্গে ভাব করার সময় তার নেই। কাজে যেতে আসতেই অনেকের সঙ্গে দেখা হয়। কেউ বসে থাকে দাওয়ায়, কেউ সামনে পড়ে পথে, কারও সঙ্গে দেখা হয় মুদি দোকানে রেশন-খানায বাজারে, কারও সঙ্গে বাসে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুদণ্ড কথা হয়, তাতেই আদান-প্ৰদান হয় আসল খবরগুলির, তাতেই বজায় থাকে এবং গড়ে ওঠে হৃদ্যতা। কারও বাড়িতে অসুখ-বিসুখ, কাজে বেরিয়ে যাবার সময় একটু ঘুরে খবর জেনে যাওয়া যায়। কয়েক মিনিট বাড়তি সময় দিয়ে। দেখা যায় পাড়ায় বা আত্মীয়বন্ধুর বাড়ি ক্রিয়াকর্মে গিয়ে সামাজিকতা বজায় রাখা থেকে পাড়ার বৈঠক বা আডডায় গিয়ে বসার জন্য সময়ের অভাব হয় না মোটেই! এই মেলামেশার ফলে স্থানীয় নানারকম লৌকিক ব্যাপারে তাকে আজকাল ডাকা হয়। সে সবে অংশ নিতেও তার অসুবিধা হয় না। এমনি পার্থক্য টাকার চিন্তায় হন্যে হয়ে বেড়ানো আর টাকা করার সাধকে সাধনায় দাঁড় করানোর মধ্যে । সময় তখনও থাকত। কিন্তু আত্মীয়তা বন্ধুত্ব সামাজিকতার জন্য সময় দেবে কে ? সে ইচ্ছা! আসবে কোথা থেকে ? মেলামেশার বদলে ঘরের কোণে একলা বসে চিন্তাজ্বরে মুহ্যমান হয়ে