পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র সপ্তম খণ্ড.pdf/২১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

良>之 মানিক রচনাসমগ্ৰ ছেলেবেলা বিধবা হয়ে আজ তার সাতাশ বছর বযস। সে বিশ্বাস করতে পারত না যে নিজে যোচে হাত ধরে টানলেও মানুষ তাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে,-দেবতা ছাড়া এটা অসাধ্য। রাখাল তাই তার কাছে সত্যই দেবতা। রাখাল গভীর মমতার সঙ্গে বলে, যে সব দিন চলে গেছে, যেতে দাও। যে জেলখানায আটক ছিলে সেটা ভেঙেই পড়ছে। আপশোশ করে লাভ কী হবে ? জীবন তো তোমাব ফুরিযে যায়নি, এবাব অন্যভাবে গড়ে তোল জীবনটা । একটি হাত তাব ধরাই থাকে রাখালের হাতে। অন্যহাতে চোখ মুছে সে ব্যাকুল দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। এই জীবন দিয়া শার কী করুম ? জীবন কি ফেলনা মানুষের ? আমি তোমায় শিখিয়ে দেব কী করে নতুন জীবন গড়বে। হাত টেনে নিয়ে নির্মলা গড় হয়ে তার পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্ৰণাম করে। ষোলো বছর বয়সে বিধবা হযেছিল নির্মলা, বাইশ বছৰ বয়সে বিয়ে হবে শোভাব। দুজনেই ৩াবা জানে না জীবন নিয়ে কী করবে। হতাশার সঙ্গে মানুষেব উপর তীব্র একটা বিদ্বেষ আছে নির্মলাব। -- জীবনেব অভিজ্ঞতায় যার জন্ম। আশ্চর্য এই, শোভাব হতাশাও নেই জ্বালাও নেই। কেন জ্বালা নেই বলে গায়ের জালায় সাধনা আক্ষেপ করেছে তাব কাছে ! শোভারও একদিন আসবে হতাশা আর জ্বালাবোধ। অভিজ্ঞতার সঙ্গে আসবে। যে কৃত্রিম কুয়াশায় আচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছে তার মন সেটা কেটে গেলেই আসবে। সাধনা বলে, ও মেয়েটার কথা বোলো না। আমায়, ঘেন্না হয়। তোমার ওই নির্মলার জন্য মায়া হয়, বেচারির উপায় ছিল না। কিন্তু এ মেয়েটা কী ? ও তো আর বেড়াজালে আটক থাকেনি জন্ম থেকে ! P সাধনার কাছে এতটুকু ক্ষমা নেই শোভার । তার নিজের জীবনের সমস্ত বন্ধন সংকীর্ণতা অসহায়তা আর অপমানেরই প্ৰতীক হয়ে যেন দাঁড়িয়েছে মেয়েটা। প্রভার সঙ্গে শোভা তাব বাড়িতে বেড়াতে এলে ভদ্রতার খাতিরেও সে এই ঘূণা আর অবজ্ঞা চাপতে পারে না । শোভা টের পেয়ে বলে, সেজদি, আমি একটু ঘুরে আসছি। সে চলে গেলে প্ৰভা হেসে বলে, আগে ঘর ছেড়ে বেরোত না। কী-দিন খুব যাচ্ছে বন্ধুদের কাছে। আজকালিকার মেয়ে তো, বিয়ের আগে জামা-টামার প্যাটানটি পর্যন্ত নিজেরাই পরামর্শ করে ঠিক করবে ! প্রভার হাসিভরা মুখেও একটা চড় কষিয়ে দেবার সাধ জাগে সাধনার। বিয়ের নামে বেশ্যাবৃত্তি করার সুযোগ পেয়েছে বলে শোভা খুশি, প্রভাও খুশি বোনকে এই সুযোগ জুটিয়ে দিতে পারছে। বলে ! ভোলার মা আজও ডিম বেচে। মাঝখানে গরমে ডিম তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যেত বলে কিছুদিন ডিম বন্ধ রেখে তরকারি বেচেছিল। কুমড়োর ফালি, কঁচা আম, কঁচা লংকা, লেবু এই ধরনের তরকারি। দু-একপশলা বৃষ্টি নেমে গরম কমায় আবার সে ডিম বেচছে, তার সঙ্গে কিছু কিছু তরকারি বেচাটাও বজায় রেখেছে। রাখাল বলে, তুমিও কারবার বাড়ােচ্ছ ভোলার মা ?