পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র সপ্তম খণ্ড.pdf/২২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SRSR8 মানিক রচনাসমগ্র দুর্ভাবনায় নয়, এই ভাবনায় ক্লিষ্ট দেখাচ্ছিল তার মুখ। এ ব্যাপারে রাখাল এগিয়ে যাবে। কিন্তু তার উপদেশ ও পরামর্শ শুনতে সে রাজি নয়। অথচ কাজে রাখাল সাধনার উপদেশ অনুসারেই চলে। সাধনা তাকে অন্যের সাথে পরামর্শ করতে বলেছিল এটা অবশ্য খেয়াল না রেখেই। নিজেই সে হিসাব করে। এবং হিসাব করে। পরদিন সকালে যায় সুমতির কাছে। সুমথি তখন সুমতির কাছে সাধনার সঙ্গে তর্কাতর্কির গল্প করছিল। সুমতি খুশিতে গদগদ হয়ে তাকে অভ্যর্থনা করে না বলে রাখাল একটু ক্ষুন্ন হয়। সুমথের উপস্থিতিটা তার পক্ষে বরদাস্ত করাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সুমতি বলে, আসুন রাখালবাবু! সকালবেলাই যে ? একটু দরকারি কথা ছিল। বলে সে সুমথের দিকে বিশেষভাবে তাকাতে আরম্ভ করতে না করতে সুমথ যেন অদৃশ্য হয়ে যায় ! কী কথা বলুন ? সবকথা খুলে বলার ইচ্ছা রাখালের ছিল না। সুমতিকে মোটামুটি প্রভাতের প্ল্যানের কথা জানিয়ে মিটিং ডাকতে তার সাহায্য চাইবে ভেবেছিল। কিন্তু সুমতির সঙ্গে পারা দায়। সে জেরা করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবকথা জেনে নেয়। তারপর মন্তব্য করে, ওদের কোনো মতলব আছে। নইলে এ প্ল্যানের কথা অ্যাদিন চেপে রেখেছিল কেন ? ওদের তো নিশ্চয় জানােত, তোমাদের মঙ্গলের জন্যই তোমাদের তাড়াচ্ছি। ! রাখাল বলে, আমিও তাই ভাবছিলাম। তবে মিটিং ডাকার ভার নিলেন কেন ? সুমতি শুধু প্রশ্ন করেছে। সাধনা স্পষ্ট নিন্দা করেছিল। কিন্তু দুজনের কথার সুরা যেন একই ! রাখাল ভেবেচিন্তে বলে, মিটিং ডাকাই তো ভালো? আগে ওদের অন্যরকম মতলব ছিল, সে তো জানা কথাই। জোরজবরদস্তি করে সকলকে ভাগাবার ফিকির ছিল। কিন্তু যাই হোক, সে সব মতলব তো ছাড়তে হয়েছে। এখন সকলের সামনে যদি প্রতিশ্রুতি দেয় যে কারখানা গড়বে, সকলকে কাজ দেবে-খানিকটা করতে হবে নিশ্চয়। একেবারে ফাঁকি দিয়ে যেতে পারবে না। ওদের বিশ্বাস কী ? কিন্তু আর কী করার আছে বলুন ? এ ভাবে তবু ওদের খানিকটা বাঁধা যাবে, ওদের নিজেদের কথায়। কিছু না করে পারবে না কলোনির লোকদের জন্য। অন্যদিকে দেখুন, ওদের এ প্ল্যানটা না মানলে ওরা কি ছেড়ে কথা কইবে ? যেভাবে পারে কলোনির লোকদের তাড়াবেই। গুন্ডা লাগাবে, পুলিশ আনবে সেই ভয়ে- ? ভয়ে নয়। অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা করে। আপনি আমি প্ৰাণপণ করেও ওদের কি রাখতে পারব এই জমিতে ? ধরুন আপনি আমি রক্ত দিয়ে ওদের ওখানে রাখলাম, কুঁড়েগুলি টিকিয়ে দিলাম। কিন্তু তারপর ? দু-চারহাত জমিতে হােগলার ঘর তুলে বুনো অসভোর মতো। ওদের জীবন কাটবে, এটাই কি আমরা চাই ? প্রভাতবাবুর জমিতে এভাবে মাথা গুজে থেকেই কি এদের মোক্ষলাভ হবে ? মানুষ হয়েও এ রকম অমানুষের মতো বাঁচার জন্যই কি এরা লড়াই করবে, আর আমরা সেটাই আদর্শ दी। 22 (क्राब ? সুমতি চেয়ে থাকে।