পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র সপ্তম খণ্ড.pdf/২২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক রচনাসমগ্র ܔܛ কে বন্ধ করলে ? বাটাছেলে ? না। অঞ্জলি। বললে কী জানো ? ওপরের কােল নিজেদের কলে নাইবে যাও—এ সব ট্যাকটিকস আমরা জানি। আমায় ঠেলে সরিয়ে দিয়ে কলে বালতি বসালে। ট্যাকটিকস মানে কী বাবা ? টিপটিপ জল পড়ে কলে, বালতি ভরতে আধঘণ্টা লাগে, উনি নিজেদের কল ছেড়ে আধঘণ্টা ধরে নাইতে এসেছেন। এ সব মতলব আমরা যেন বুঝি নে ! বীরেন। সখেদে বলে, বাড়ি বলুন, জমি বলুন, ভাড়া দেওয়া ঝাক:মারি মশায় ! দেশের আইন হয়েছে তেমনি। যে দখল করেছে তারই দখলিস্বত্ব ! রাখাল হেসে বলে, না মশাই, না। তা হলে তো সত্যিকারের রামরাজ্য হয়ে যেত। জমিটমি সব জমিদার জোতদারেরই আছে-যারা চাষ-আবাদ করে, তারা কি আর দখলিস্বত্ব পেয়েছে জমিতে ? বাড়ি ভাড়ার আইন তো আপনাকে বঁচিয়ে দিযেছে মশায়। বীরেন দত্ত কথাটা বুঝতে একটু সময় নিতে চায়। তার মোটাসোটা মেয়েটা এতক্ষণ ভিজে কাপড়টা টেনেন্টুনে লজ্জা করার প্রমাণ দেবার চেষ্টা করতে করতে ফেগাস করে বলে, আমাদের বাড়ি, বাবা গাঁটের পয়সা খরচ করে বাড়ি করেছে, দূর হয়ে যেতে বললে যায় না কেন ইয়ের ব্যাটাব্যাটিরা ? কেন যাবে ? ভাড়া তো দিচ্ছে। ভাড়া চইনে। দয়া করে দূর হয়ে যাক। বীরেন দত্ত এতক্ষণে মুখ খোলে, খক্‌খক্‌ করে কাশতে কাশতে হাত তুলে তাদেব বাজে তর্ক থামাতে বলতে বলতে দিশেহারার মতো হঠাৎ উঠে গিয়ে রঙিন কঁচের আলমারি খুলে কী একটা ওষুধ মুখে পুরে দেয়। আস্তে আস্তে কাশিটা থামে। কী বলছিলেন কথাটা ? বাড়িভাড়া আইনটা না হলে আমরা বাড়িওয়ালারাই মারা পড়তাম ? পড়তেন বইকী ! আপনাদের লোভের সীমা নেই, লিমিট রাখতেন না, বাড়াবাড়ির চূড়ান্ত করে ছাড়তেন। ফলটা হত। উলটাে। কী রকম ? মানুষ খেপে যেত। যতটা শোষণ করতে পারছেন তাও পারতেন না। শোষণ করারও রীতিনীতি আছে তো ? একটা সীমা বজায় রাখতে হয়। আপনাদের লাভ ঠেকাবার জন্য নয়, অসম্ভব লোভ করতে গিয়ে আপনারা পাছে একটা বিদ্রোহ ঘটিয়ে দেন, সেটা ঠেকাবার জন্য আইন হয়েছে। বীরেন দত্ত বাঁকা হাসি হাসে। আপনাদের কী আর বলব। মশাই, আপনার নাকের ডগাটি শুধু দেখতে পান। বলি, লিমিটি বজায় রাখার জন্যই যদি আইন, শুধু বাড়িভাড়ার বেলা এত কড়াকড়ি কেন ? চােরাকারবারের লাভে বুঝি লিমিট লাগে না ? কাপড়ের লাভে ? চিনির লাভে ? ও সব অব্যবস্থাও সব অব্যবস্থা থাকতে পারে-বাড়িভাড়ার বেলাতেই ব্যবস্থাটা জাবুরি হয়ে উঠল। ওই যে বললাম, নাকের ডগা ছেড়ে আপনাদের চোখ চলে না ! বাড়িওলারা যদি লাখপতি কোটিপতি হত, তাহলে আর এ আইনের বালাই থাকত না। মুনাফা যারা লুটছে তারা বাড়িভাড়ার পিত্যেশ করে না। ইয়া বড়ো বড়ো বিল্ডিংয়ে ক-টা প্ৰাণী বাস করে, ইচ্ছে করলে পঞ্চাশটা ভাড়াটে বসাতে পারেবসায় ? লতিকা ফোড়ন কাটে, কেন ওঁর সঙ্গে তর্ক করছ বাবা ? উনিও ভাড়াটে-বাড়িওলাদের খারাপ ছাড়া ভালো ভাবতেই পারবেন না। উনি ভাড়াটাই দেখবেন-বাড়ি করতে কত খরচ হয়। সে হিসেব তো ধরবেন না !