পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র সপ্তম খণ্ড.pdf/২৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S88 মানিক রচনাসমগ্ৰ যেমন আজও তেমনি ফাকি আর ধাপ্লাবাজি দিয়ে টিকিয়ে রাখা বিকারের বিরাট বেড়াজালে তাদের আটক রাখা হয়েছে ! রাখালদের বেকার হয়ে না খেয়ে মরার দশা হয়। কিন্তু বেকারত্বের প্রতিকারের বদলে বিরাট তোড়জোড়ের সঙ্গে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চলে ভদ্রজীবনের কৃত্রিমতা অবাস্তবতা সম্পর্কে মিথ্যা মোহ। রাখালের মতো ভদ্রলোকদের জীবনের বাস্তবতা যেমনই দাঁড়াক, ভদ্র থাকাই অসম্ভব হয়ে যাক, ভদ্রজীবনের নিছক সাজানো-গোছানো খোলসগুলি, কৃত্রিমতাগুলি, অবাস্তব ভাবাবেগগুলি জীবনের সেরা সম্পদ হিসাবে মহাসমারোহে বিঁচিয়ে রাখা হয় ! তলিয়ে সব না বুঝুক, বাসন্তী জীবনের সহজ নিয়ম মানে। সে তাই টের পেয়েছে জীবনে কত অনিয়ম আমদানি হওয়ায় তাদের আজ কী দশা ! নীচের তলার সাধারণ গরিব মানুষের সবরকম দুৰ্দশাই আছে, একেবারে না খেয়ে মরা পর্যন্ত চরম দুৰ্দশা,-কিন্তু মৃত জীবনের ভূতের বোঝা তাদের সইতে হয় না। তারা যতই পিছিয়ে থাক, সংস্কার ও বিভ্ৰাস্তিতে আচ্ছন্ন হয়ে থাক, তারা নিজের জগতেই আছে, বৃক্ষ কঠোর বাস্তবতা নিয়েই আছে। সেখান থেকে শিশুর মতো হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগোলেও প্রতিদিন এগোচ্ছে। রাখাল সাধনাদের মতো জরি চুমকি বসানো লাল নীল বাতি দিয়ে সাজানো হাতির দাঁতের কাবুকার্য করা কৃত্রিম অবাস্তব মিনার ঘাড়ে বয়ে বেড়ানোর ঝঞ্ঝাট তাদের নেই। ভদ্রঘরের ছেলে বাধ্য হয়ে কারখানায় খাটছে কন্ডাকটরি করছে, ফেরিওয়ালা হয়েছে-কিন্তু সেটা যেন জীবনটাকে খাপ খাইয়ে নিয়ে বঁাচার জন্য নয়, ভদ্রজীবনটাকে কোনোরকমে বঁচাবার জন্য ! এ দায় নেই বাসষ্ঠীদের। ছলনা। চাতুরি নিয়ে নয়, হিসাব করা পলিসি নিয়ে নয়, রাজীবের জুর হলে সালসা খাওয়ানোর মতো প্রয়োজনীয় মনে করেই অন্যভাবে তার শরীর মন অসুস্থ দেখলে বাসন্তী অনায়াসে তাকে বলতে পারে : শরীর খারাপ লাগছে ? একটা পাট এনে খেয়ে সকাল সকাল খেয়ে শুয়ে পড়ো না । সোজা কথাটা সে বোঝে।” দরকার হলে পাট রাখাল খাবেই। মৃত্যুপণ করে চেষ্টা করলে একদিন কী দুদিন হয়তো সে ঠেকাতে পারবে রাজীবকে-তার পরদিন তার মৃত্যুকে অগ্রাহ্য করে রাজীব বাইরে পাট খেয়ে আসবে ! W. অসুখের মতোই এ রকম একটা অবস্থা আসে। শরীর মনের। পাট না খেয়েও অবশ্য সে অবস্থার প্রতিকার করা যায়। কিন্তু যে অবস্থায় তারা আছে তাতে সেটা সম্ভবপর কোনো প্ৰতিকার DYSLDBD BDBDB BD সোভিয়েটে নাকি এভাবে এই কারণে কারও মদ খাবার দরকার হয় না। এ সব উদ্ভট রোগের নাকি মুলোচ্ছেদ হয়ে গেছে সে দেশে। ভাগ্যবান দেশ! ধন্য দেশ। কিন্তু বাস্তব জীবন পিষে দমিয়ে দিয়েছে রাজীবকে। এটা কোনও বীজাণু-ঘটিত রোগ নয়, সমগ্র জীবনের মাস-বছর-ঘটিত বাস্তবতার সৃষ্টি করা রোগ। পাট না খেলে রাজীব তিন-ভাগ রাত ছটফট করবে। মদ না খেয়েও মাতালের চেয়ে বেশি। আবোল-তাবোল বকবে-শ্যামাসংগীত উলট-পালটে গাইবে, কপাল চাপড়াবে-শরীর মনের যন্ত্রণায় যেন মন্দমাতালের চেয়েও কষ্ট পাবে। পরদিন হয়ে থাকবে নিজীবি প্রাণহীন মানুষ। তার চেয়ে কী আসে যায়। এ সময় একটু খেলে ? শরীর মনের কষ্টটা ভুলে বোলা পর্যন্ত নাক ডাকিয়ে ঘুমিয়ে অনেকটা তাজা বোধ করলে ?