পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র সপ্তম খণ্ড.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 মানিক রচনাসমগ্ৰ সুযোগের অপেক্ষায় সকলে বসে থাকত না। যে কোনো দিন যে কোনো সময় তাকে ডাকিয়ে এনে অতিরিক্ত সম্মান ও আদর জানাবার জন্য কোনো অজুহাতই দরকার ছিল না। এদের। আজকের এটা ওদের আরও বড়ো সংগ্রাম। কোনো কারণে মরিয়া হয়ে উঠতে হয়েছে। এদের। জ্যোতিই ঘটিয়েছে। কারণটা সন্দেহ নেই। আজ জ্যোতি তাদের দুজনকে একসাথে ডেকে নিয়ে আসায় এমনি নগ্নভাবে স্পষ্টভাবে নিজেদের মনোভাব তাকে আর পরিমলকে না জানিয়ে দিয়ে কোনো উপায় থাকেনি এদের। পরিমল বলে, আমি উঠলাম। একজন রোগী আসবার কথা আছে। বলে সে সত্যসত্যই উঠে দাঁড়ায়। জ্যোতি হেসে বলে, হার মানলে তা হলে ? মোহিনী তীব্র ভৎসনার সুরে বলে, জ্যোতি । তারপর শাস্তকণ্ঠে পরিমলকে বলে, একটু বোসো বাবা, চা খাবারটা খেয়ে যাও। আরেকদিন খাব। পরিমল চলে যাবার পরে বড়েই তাড়াতাড়ি ঘর খালি হয়ে যায়। ঘরে থাকে শুধু জ্যোতি। সেও চলে গিয়েছিল ঘর ছেড়ে কিন্তু তাকে লুচির থালা দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জ্যোতি বলে, সবাই বুঝিয়ে দিয়েছে মনের কথা। আমিও আমল দিলাম। এবাব তুমি বলে ফেলো তোমার প্রাণের কথাটা । আমার প্রাণে কোনো কথা নেই। সেটা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেই হত ! বললেই হত, না কাকিম, অত আদরে আমার কােজ নেই, আমি লুচি খাব না। আমার তো দরকার পড়েনি খেপে যাবার। তার কড়া কথায় মুখ কালো হয়ে যায় জ্যোতির। সামনে এসে তীব্র চাপাগলায় বলে, আমায কেন বলতে আসে। তবে আমল দিই না বলে তুমি বিগড়ে গেছ ? আরেকজনকে আমল দিই বলে তুমি রাগ করেছ ? কেদার চুপ করে থাকে। জ্যোতিকে নিয়ে এ বাড়ির সাম্প্রতিক সংঘাতটা এবার মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে এসেছে তার কাছে। জ্যোতি আবার বলে, লজ্জা করে না তোমার ? ডাক্তারি পাস করেছ বলে জগৎটাকে কিনে ফেলেছি নাকি ? মা-বাবার মনে মিথ্যে আশা জাগিয়ে কেন তুমি আমায় জব্দ করবে ? ডাক্তার ! মতিগতির ঠিক নেই, সে আবার ডাক্তার। জল খেয়ে কেদার চায়ের কাপটা তুলে নেয়। মৃদুস্বরে বলে, তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে জ্যোতি । যদি হয়েই থাকে ? আমার কাছে পাত্তা পাও না, বাঁকীপথে বাড়ির লোককে বাগ মানিয়ে আমায় তুমি বশ করবে ? এত নিচু মন তোমার ? ডাক্তারি পাস করে দাম বেড়েছে, এমনি করে সেটা মা-বাবাকে ঘুষ দিয়ে তুমি গায়ের ঝাল। ঝাড়বে আমার ওপর ? কেদার জোর দিয়ে বলে, তুমি উলটাে বুঝেছি। আমার গায়ে ঝাল নেই। কারও মনে আমি মিথ্যে আশাও জাগাইনি । জ্যোতি ফেগাস করে ওঠে, মিছে কথা বোলো না। এমন করে আমায়। তবে গঞ্জনা দিচ্ছে কেন ? আমায় বিয়ে করতে তুমি একপায়ে খাড়া, আমি শুধু দুর ছাই করি বলে, আরেকজনের সঙ্গে মিশি। বলে তুমি বিগড়ে গিয়েছ