পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র সপ্তম খণ্ড.pdf/৩০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বাধীনতার স্বাদ 925 কথা। আজ সে জয়ী হয়েছে। আজ এ বৈঠকে এতক্ষণ ধরে সোজাসুজি হােক ঘুরিয়ে হােক প্ৰণব কথা বলেছে তর্ক করেছে এক রকম তারই সঙ্গে। মণি প্রস্তাব করে, তবে আরও কিছুক্ষণ বসা যাক। না, খাওয়াদাওয়া আগে হবে ? হবে ? খাওয়া তো আছেই। সেই ছেলেটি-নীলিমার ভাই গোকুল ! মণি বলে, তুমি তো কিছুই বলছি না গোকুল ! শুনছি। বুঝতে চেষ্টা করছি। সাধারণ মানুষ মানে তো মজুরচাষি ? গোকুলের কথা শুনে সকলেই প্ৰায় হেসে ওঠে, প্রণব পর্যন্ত। মণি একটু আশ্চর্য হয়ে যায়। এত সহজে আবার ধাতস্থ হযে গেল আসরটা ! প্ৰণবের তো অন্তত খানিকক্ষণ গুম খেয়ে থাকা উচিত ছিল। প্রণব বলে, মজুরচাষি তো বটেই। তার সঙ্গে গরিব মধ্যবিত্ত সবাই। নীলিমা ভাইকে বলে, এটাও জানিস না তুই এতদিনে ? শুধু কবিতা লিখলে হয় না ! গোকুল বলে, তোমরা যে সব গোল পাকিয়ে দাও ! প্রণবদা বললেন, একটা মানুষকে ধরে সাধারণ মানুষের ক্টোকটা কোনদিকে ধরা যায়। মজুরচাষি মধ্যবিত্ত সবাই তাহলে এক রকমভাবে নিচ্ছে সবকিছু সবার রিয়্যাকশন এক রকম ? সবাই প্ৰণবের দিকে তাকায। নাঃ, গোকুল ছেলেমানুষের মতো কথা বলেনি ! মনে হয় গোকুলের প্রশ্ন শুনে প্রণব খুশি হযেছে। সে বলে, আমিও তাই ভাবছিলাম। এতক্ষণ মিছে বকেছি, আমার কথা কেউ ধরতে পারেনি। একটা বিষয়ে আলোচনা শুরু করে আমরা খানিক পরে বিষয়টা ভুলে যাই, সেটাই হয়েছে মুশকিল ! কোথা থেকে কোথায চলে এসেছি খেয়াল থাকে না। মণি ধৈর্য হারিয়ে বলে, তুমি বড়ো বক্তৃতা করো। ঠাকুরপো। সোজাসুজি বলো না ! প্ৰণব একমুহূর্ত তার দিকে তাকিয়ে থাকে। নিরীহ এবং প্রতিদিনের নীরব শ্রোতা ভূপেন বলে, না না, একটু গুছিয়ে না বললে এ সব কথা বোঝানো যায় না, বোঝাও যায় না। প্রণব বলে, আমি যেভাবে বলতে জানি সেভাবেই তো বলব, নইলে বানিয়ে বলতে হয়। যাকগে, আমরা মানুষের দাঙ্গাবিরোধী মনোভাবের কথা বলছিলাম, এসে ঠেকালাম শ্রেণি বিচারে। গোকুল তাই বলছে, আমি শ্রেণিবিভাগটা উড়িয়ে দিয়েছি, যেটা আসল বিচার। সত্যই তো, শ্রেণিটাই মানুষের আসল পরিচয় । যত কিছু লড়াই সব আসলে শ্রেণির লড়াই। প্রণবদা শ্রেণি-ট্রেণি তুলে দিয়ে মানুষকে জনসাধারণ নাম দিয়ে একাকার করে দিয়েছেন, গোকুল এটা বরদাস্ত করে কী করে ! গোকুল একটু হাসে। আমি কিন্তু যা বলেছি শ্রেণিবিচারের ভিত্তিতেই বলেছি গোকুল। হিন্দু বা মুসলমান বলে কোনো শ্রেণি নেই। কিনা, তাই মিছামিছি শ্রেণির কথা তুলে কথা বাড়াইনি। মজুরশ্রেণি সবচেয়ে বেশি। দাঙ্গাবিরোধী। কিন্তু আমরা কি সেকথা বলছিলাম, কোন শ্রেণির মধ্যে দাঙ্গবিরোধী মনোভাব বেশি। বা কম ? যতগুলি শ্রেণি মিলিয়েই জনসাধারণ হােক, আমরা সেই জনসাধারণের মোট মনোভাবটা বিচার করছি। হিন্দু মুসলমানের প্রশ্ন নিয়ে মজুর আর চাষির দৃষ্টিভঙ্গিতে পার্থক্য থাকতে পারে, মধ্যবিত্ত আরও খানিকটা ভিন্নভাবে দেখতে পারে ব্যাপারটা, কিন্তু মোটামুটি বড়ো একটা মিল আছে সবার দৃষ্টিভঙ্গিতে। সেই মোট মনোভাবটাই আমাদের বোঝা দরকার। ভূপেন বলে, আমারও তাই মনে হয়। তবে ভাবি কী, ওভাবে ধরলে হিন্দু-মুসলমান একাকার হয়ে যায় না ? জনসাধারণ আছে--হিন্দু-মুসলমান বলে কিছু নেই। অথচ দাঙ্গাহাঙ্গামাটাও বাস্তব, उलैिश (ल७शा शाझे ना।