পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র সপ্তম খণ্ড.pdf/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

የg}Qዪö মানিক রচনাসমগ্র মণির আর্তনাদ সকলকে চমকে দেয়। কিন্তু বিভ্রান্ত করে না। গানের সুর যেমন খেলে বেড়িয়ে চড়তে চড়তে চরমে ওঠে, আবাব ফিরে আসে শূরুতে, মণি যেন উচ্চগ্রামে বাধা আলোচনা এবং মনগুলিকে আঘাত দিয়ে ফিবিয়ে এনেছে গোড়ায়। সরস্বতী বলে, সত্যি, আমরা খালি নেতা নিয়ে, মন্ত্রীমিশন নিয়ে, দাঙ্গা নিয়ে, কংগ্রেস-লিগকমু্যনিস্ট নিয়ে মেতে আছি। চব্বিশ ঘণ্টা সামলাও সামলাও ভাব। কেন, আমাদের সাধ-আহ্রদ সুখ-দুঃখ নেই ? নেতাবা চুলোয্য যাক, রাজনীতি মরুক, টুটু, তুই একটা গান গেয়ে শোনা দিকি व्लश्ी)ि ! নীলিমা নিশ্বাস ফেলে বলে, “সার্থক জনম আমার” গানটা গা। সত্যি আমরা সবাই যেন মহাপাপ কবেছি, দিনরাত খালি জপ করছি দেশ আর সমাজ, সাম্রাজ্যবাদ। আর স্বাধীনতা, বিপ্লব আর সমাজতন্ত্র। বস্তির গাবিব মানুষগুলি পর্যন্ত হইচই ফুর্তি করছে, আমাদের যত দায় ! ঢোলক ঘুঙুর আর মিলিত কণ্ঠের মোটা আওয়াজে সস্তা সংগীতের রেশ সত্যই ভেসে আসছিল। প্রণব মণির কাছে প্রায় কৃতজ্ঞতা বোধ করে। বিপ্লব যে আতিশয্য নয, আত্মহত্যা নয়, মানুষের সুখ-দুঃখের নিয়ম বিধানেই বিপ্লব হয়, সেও প্রায় ভুলতে বসেছিল এটা। টুটু ভুপেনের মেয়ে, বছর পনেরো বয়স। যেমন রোগা তেমনই কালো, ভয়-ভাবনা-ভীবুতা মাখানো মুখ। গান গাইবার অনুবোধেব জন্য সে মোটেই প্ৰস্তুত ছিল না। সে এবং দিকে ওর দিকে তাকায়, বার কয়েক টোক গেলে। তারপর মুখ উচু করে চাবতলা বাড়ির ছাদ-ঘেষা মাঝাবি চাদটাৰ দিকে ভুকুটি করে তাকায়। ধীরে ধীরে সে গাইতে আবস্ত করে, গলার গান যেন তাব নববধূব মতো বিয়ের মন্ত্রের স্বামী সম্ভাষণে চলেছে, প্ৰথমে এই রকম ধরাবাধা নিয়মতান্ত্রিক মনে হয়। ক্ৰমে মেয়েটা নিজেই মশগুল হতে থাকে নিজের গানে, ক্ৰমে তার কণ্ঠ ও সুর জগতেব সেবা অভিসারিকাব মতো ঘর বর হিংসা দ্বেষ হানাহানির সীমানা ছাড়িয়ে বিরাট প্ৰাণের সুব্যবন্যার মতো ছড়িয়ে পড়ে। গান শেষ করে টুটু নীরবে উঠে গিয়ে আলসে ঘেঁষে দাঁড়ায়। এক্তিগুলি মনকে সে মন্ত্ৰমুগ্ধ করেছে তার খেয়ালও থাকে না । একটি মেয়ের একটি গান বিব্রত অশাস্ত পীড়িত মনগুলিকে কীভাবে বদলে দিতে পারে সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে আবার যখন ধীরে ধীরে কথাবার্তা আরম্ভ হয়। ছাড়া-ছাড়াভাবে বিচ্ছিন্ন পীড়নের মতো প্ৰত্যক্ষ সমস্যাগুলি একে একে না এসে বৈঠকে এবার সমগ্ৰ দেশ, বৃহৎ পৃথিবী, সমস্ত মানুষ, অতীত ইতিহাস ও আশাতীত ভবিষ্যতের আনাগোনা চলে নানা কথায়, মানুষের আনন্দময় মুক্ত স্বাধীন জীবনের নূতন ভূমিকা সৃষ্টি হয়। জগতের মানুষ আজ কোন দিকে চলেছে, জীবনের অভিযান কোন সার্থকতার উদ্দেশ্যে, ভারতের কোন মুক্তি জগৎকে মুক্তিব্য পথে এগিযে নোবে, সোভিয়েট রাশিয়ায় যে নূতন সভ্যতার ভিত্তিপত্তন হয়েছে তার কর্মময় বাস্তব চেতন-মুক্তির মর্ম কী, কীসে মানুষের প্রকৃত স্বাধীনতা ? রাত্রি গভীর হয়ে আসে, লক্ষ লক্ষ স্পন্দিত হ্রদায্যের বিচরণ-ক্ষেত্র মহানগরী আকাশ পর্যন্ত গুঞ্জন মৃদুগুঞ্জনে জীবস্তু স্তব্ধতা বিস্তার করে যেন কান পেতে তাদের কথা Gf ofit ভোরে দেখা গেল নানি পথের ধারে মুখ থুবড়ে মরে পড়ে আছে। বোসেদের দোতলা বাড়ির নীচের তলায় দালানের গঠনের সঙ্গে একত্র গড়া মার্বেল পাথরের মন্দিরটির ঠিক সামনে। রক্তে মাখামাখি হয়ে আছে নানির সর্বাঙ্গ, তাকে ঘিরে রাস্তায় ছড়িয়ে আছে চাপ চাপ অজস্র রক্ত। নানির ওই ক্ষীণ