পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র সপ্তম খণ্ড.pdf/৩২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বাধীনতার স্বাদ VRV) গোকুল বলে, বলেন কী ? সন্ধ্যাবেলা ভাত খেযে নিলে মাঝরাতে খিদে পাবে যে ? চা-টা খাই, ভাত ঠিক সময়েই খাব। এক রাঁধছেন কেন ? ভারী রান্না, এতে আবার কজন দরকার ? মুখ-হাত ধুয়ে এসে গোকুল চা খায়, তার বাড়ির কথা মণি তোলে না। আসলে, কথাটা সে ভুলে গিয়েছিল। গোকুল নিজে থেকে বলে, আপনাদের ও পাড়াটা দেখে এলাম। অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। মালপত্র কিছু রেখে এসেছিলেন ? চেয়ার টেবিল খাট, কা-মন কয়লা, এই সব ছিল। বোধ হয়। আর নেই। বাড়িতে ঢুকেছিলে ? তালা দিয়ে এসেছিলাম। তালা নেই। অন্য লোক বাড়ি দখল করেছে, ভেতরে যেতে পারিনি। এমনিই প্ৰাণটা যেতে बमथिल। মণি ব্যাকুল হয়ে বলে, কেন তবে গেলে পাড়ার মধ্যে ? আমি শুধু বলেছিলাম তফাত থেকে গা বঁচিয়ে পাড়ার অবস্থাটা একটু জেনে আসতে। বাড়ি পর্যন্ত যেতে তো বলিনি তোমাকে ? যে বিপদ ঘটতে পারত। তার জন্য নিজেকে অপরাধী মনে করে মণিকে কাতর হয়ে পড়তে লেখে ৬৭াকুল বুঝিয়ে বলে, জানলে আমিই কি যেতাম ? প্রথমটা কিছুই বুঝতে পারিনি। হঠাৎ কী @दाँी घोळ, न्शेल ऊांदनीं श्र्व्नि भी । নীলিমাকে গোকুল জিজ্ঞাসা করে, ওঁকে এক রাঁধতে দিলে কেন ? নীলিমা উদাসভাবে বলে, ওঁনার শখ। আমাদের খেদিয়ে দিলেন। কারও কিছু করবার দরকার নেই, উনি একা সব করবেন ! দুপুরে মণি একটু শুয়েছিল। উত্তেজনার প্রতিক্রিয়ায় মনটা ছিল শাস্তু। বাইরে থেকে ফিরে সুশীল একটু তফাতে স্নান বিষগ্ন মুখে চুপচাপ বসে থাকার পাঁচ মিনিটে সে শাস্ত ভাবটুকুও বিগড়ে গেল। সুশীল প্রথমেই কথা বললে বোধ হয় এ বকম হত না। তারপব সুশীল যখন অতি মৃদুকণ্ঠে আদরের সুরে কথা বলল গভীর বিতৃষ্ণায় জগৎটা তিতে হয়ে গেল মণির কাছে। কিছু ঠিক করলে ? সে তো বলেই দিয়েছি। 牙杯引一 মণি উঠে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। কোথায় যাবে ? রান্নাঘরে নীলিমা দুজনকে ভাত দিচ্ছিল, সেইখানে গিয়ে বসল। শানিলন্ত চুপচাপ বসে থেকে বলল, ওবেলা থেকে আমি রান্নাবান্না করব। মণি হঠাৎ প্রায় গায়ের জোরে সেই যে রান্নার দায়িত্ব গ্ৰহণ করল, মনে হল মরলেও আর এ দায়িত্ব সে ছাড়বে না। অধিকাংশ সময় সে রান্নাঘরেই কাটায়। এ দেশের মেয়েরা যে সত্যিই নিছক পুরুষের ভোগের সামগ্ৰী, রাঁধুনি চাকরানি আর পুরুষের সস্তান-সন্ততির দুধ-মা ধাই-এ খবরটা সে চিরকালই জানত। মাসিকপত্ৰাদিতে কী কম লেখা সে পড়েছে। এ বিষয়ে ! এ দেশের নারী-সমাজকে মনে মনে সে কী কম আহা জানিয়েছে। সুশীলকে কেঁচো বানিয়ে নিজের ঘর-সংসারে তার ছিল অখণ্ড প্ৰতাপ, নিজেকে অবশ্য ওই অভাগীদের দলে সে ভাবতে পারত না। অহৰ্নিশ মায়ার ছলনায় ভুলিয়ে, স্নেহ-সেবা কান্না-অভিমানের জাল বুনে, কী অধ্যবসায়ের সঙ্গেই একটি দুর্বল পুরুষ আর তিনটি ছেলেমেয়ে এই চারটি প্ৰজা নিয়ে গড়া সাম্রাজ্য বশে রেখে সে অখণ্ড প্ৰতাপে শাসন করে।