পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র সপ্তম খণ্ড.pdf/৩৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বাধীনতার স্বাদ VSVI গিরীন নির্বিকারভাবে বলে, করতেন। আজ ভুলে গেছেন,-প্ৰাণ বঁচিয়ে উপকার করলেও আপনারা চটপট ভুলে যান। কিনা, ভুলে গেলেই সুবিধা-নইলে আপনার খেয়াল থাকত কোথা থেকে, কী অবস্থা থেকে আপনাদের উদ্ধার করে এখানে আনা হয়েছিল। মণিবউদির মামা শহরে পৌঁছে প্ৰায় সারাটা দিন হত্যা দিয়ে তোষামোদ করে পুলিশ এসকর্ট জোটাতে পারেননি, তারপর মরিয়া হয়ে এসেছিলেন। এখানে। তাই প্ৰণব গিয়ে আপনাদের জ্যাস্ত উদ্ধার করে এনেছিল। তাই এখনও বেঁচে আছেন। নইলে গিরীন আপশোশের আওয়াজ করে।-নইলে, আশেপাশের বাড়ির লোকদের মতোই সপরিবারে অক্কা পেতেন। আপনাদের দক্ষিণের বাড়িটাতে হৃদয়বাবু থাকতেন না ? কপালে ফেঁটাতিলক কেটে লুঙ্গির মস্ত কারবার করতেন ? তিনি প্ৰায় সপরিবারে এখন স্বর্গে বাস করছেন, স্বর্গ বলে যদি কোনো বসবাসের জায়গা থাকে। আপনাদের উত্তর দিকের বাড়ির চোখ বড়ো বড়ো হয়ে ওঠে সুশীলের, ভয়ার্ত ভঙ্গিতে স্তম্ভিত শ্বাস টেনে সে বলে, সজনী (अन्म ? গিরীন মাথা হেলিয়ে সায় দেয়। সজনীর ছেলে দুটাে ? তার মেয়ে বেবি ? বেবি হালাতপুরের তেভাগার আন্দোলনে গান গাইতে গিয়েছিল, দলটা রাত্রে আটকা পড়ে খায়। ছোটাে ছেলেটা বেঁচে গেছে। বড়ো ছেলে কানাই গুন্ডাদের একজনের গলায় কাটারি দিয়ে কোপ মারে, সে মরে গেছে। কানাইকেও শেষ করে দেয়। সুশীল খানিক ঝিমিয়ে ঝাঝালো সুরে বলে, বেবি এখনও তেভাগার গান গাইছে তো ? যারা তার বাপ-ভাইকে মারাল, তাদের মারার গান গাইছে না ? গিরীন বলে, এক হিসাবে গাইছে, তবে তুমি যে হিসাব ধরছ, সে হিসাবে নয়। যারা তার বাপভাইকে খুন করিয়েছে, তাদের মারার গান গাইছে। খুন করিয়েছে মানে ? মারায়। সব কারসাজি তাদের, সব দায়িত্ব তাদের। হিন্দু-মুসলমান যারা অন্ধ আবেগে পরস্পরকে আঘাত করেছে, তারা কেউ খুনি নয়, খুনির উপর থেকে কল টিপছে। এটা না বুঝলে ওদেরই ফ্রাদে গিয়ে পড়তে হয়। ওরাই তো চায় যে বেবির মাথা বিগড়ে যাক, বেবির পক্ষ নিয়ে আপনার আমার মাথা বিগড়ে যাক, ধনিক মালিক মজুব চাষির তফাত ভুলে আমরা জাতের তফাতটা শুধু দেখি। বজঞ্জাতি করি ! সুশীল নিশ্বাস ফেলে বলে, কী জানি, তোমাদের এ সব রাশিয়ান যুক্তি মাথায় ঢোকে না। আমার বাপ-ভাইকে যখন মারছে, তখন কী করে হিসাব করব, আসলে এরা মান্বছে না, আড়াল থেকে ৭ মে রা মারছে, এ আমার মোটা বুদ্ধিতে ঢুকবে না। গিরীনও নিশ্বাস ফেলে বলে, বুদ্ধি আপনার মোটা নয়, সূক্ষ্ম। আপনি আগে থেকেই সিদ্ধান্ত করে বসে আছেন। আপনার নিজের ছাড়া কোনো যুক্তি মানবেন না, আপনাকে কে বোঝাবে বলুন ? বাপ-ভাইকে যখন মারছে, তখন কেউ আমার হিসাবটা করে, না আপনার হিসাবটা করে ? কানাই কি হিসাব করতে বসেছিল লোকগুলি কেন তার ব্যাপকে মারছে, কাদের উসকানিতে মারছে কিংবা ওরা কোন জাতের লোক, আগে সেটা বুঝে তারপর মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে একা কাটারি নিয়ে লাফিয়ে পড়েছিল। আপনি কেবল একমুখো নীতিকথা বোঝেন, সদা সত্য কথা বলিবে। জীবন কিন্তু চলে দুমুখী নীতিতে, সে জন্য চিরন্তন সত্যটা আসলে মিথ্যা। এভাবে না ধরলে জীবনের মানেই বোঝা य3 eन् 1 ኚrffጓቐ ዒቕጃ-88