পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র সপ্তম খণ্ড.pdf/৩৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዩoዒ8 মানিক রচনাসমগ্ৰ কীসের উদবেগ ? গোকুল সরলভাবেই বলে, আপনার মতিগতি কী দাঁড়ায়। আপনি নিজেই বোঝেন কী তাড়াতাড়ি বদলে যাচ্ছিলেন, নিজেকে মজুরনির অধম চাকরানি বলে চিনতে পেরেছেন। এবার আপনি কী করবেন সেটাই ভাবনা। বন্ধু থাকবেন না। শত্ৰু হবেন । মণি বলে, কী বলছি বুঝতে পারছি না ভাই। গোকুল বলে, দুদিক বজায় রেখে চলার মানুষ আপনি তো নন, আপনার ধাতে সেটা সয় না। ক্ৰমে ক্ৰমে হয়তো এখানে যা শিখলেন সব ফাকি মনে করা আপনার দরকার হবে।---আমাদের ওপর ভীষণ চটে না গেলে চলবে না। এখন যা সব ঘেন্না করছেন, আমাদের ঘেন্না না করে তো আর সে সব ফের পছন্দ করতে পারবেন না ! মণি কথা বলতে গেলে হাতের ইঙ্গিতে তাকে থামিয়ে গোকুল জোরের সঙ্গে যোগ দেয়, তবে ঠিক উলটােটাও যে হবে না তা কিন্তু বলছি না ! কিছুদিনের মধ্যে হয়তো সব ছেড়ে দিয়ে এসে মজুরদের সাথে ভিড়ে যাবেন ! তবে হয় এসপার নয় ওসপার-মাঝামাঝি কিছু ঘটবে না। মণি শাস্ত সুরে বলে, সংসার করলে তোমাদের বন্ধু থাকা যায় না ? কাজ করা যায় না ? রাগ করবেন না তো ? সুশীলদার সংসার করে কিছুই করা যায় না। এমনি সৃষ্টিছাড়া তোমার সুশীলদার সংসার ? অন্য সংসারে থেকে পারা যায়, এ সংসারে থেকে কিছুই পারা যায় না ? সৃষ্টিছাড়া নয়, এমন সংসার অনেক আছে। এ সব সংসারে আদর্শকে সংসারের বড়ো করা অসম্ভব, মুশকিল ওইখানে। নতুন আদর্শের জন্য কাজ করা কি শখের ব্যাপার মণিবউদি ? জগৎকে বদলাবার কাজ কি ফঁাকি দিয়ে হয় ? সংসার করেও এ আদর্শ মানা যায়।--দরকার হলে আদর্শের জন্য সংসারকে বাতিল করে দেবার জন্য প্রস্তুত হয়ে। শুধু আজকের জগতের নতুন সত্যের জন্য নয়, মানুষ চিরদিন সত্যের জন্য-আদর্শের জন্য নিজের জীবন, নিজের সুখ-সুবিধা স্নেহ-মমতা সংসার সবকিছু তুচ্ছ করেছে। মনুষ্যত্বের আসল মানেই তাই। গোকুল ভেবে বলে, নীতিকথার মতো শোনালো ? নীতি ছাড়া কী মানুষের চলে ! এ কিন্তু শূন্যে তোলা ফাঁকা নীতি নয় । বনের মানুষেরও নীতি ছিল—সতা ছিল। নীতি নিয়েই মানুষ এগিয়েছে, হাজার হাজার বছর ধরে বাস্তব অবস্থাকে বদলে নিজেকে উন্নত করেছে। কিন্তু একটা নীতি নিয়ে নয়- যে নীতি যখন মিথ্যা হয়ে গেছে, মানুষকে এগোবার বদলে পিছনে টেনে রাখতে চেয়েছে, তখন মানুষেরই অগ্রণী অংশ প্ৰাণের মায়া ছেড়ে লড়াই করে নূতন নীতি চালু করিয়েছেমানুষকে বাঁচিয়েছে। মানব সমাজের কাছে নিজের জীবন না ছেলেমেয়ে সংসার ? বাপ-মা ভাইবোন ? এটুকু বোঝার উপর সব কিছু নির্ভর করে। অনেকে বুঝছে। না বুঝে উপায় নেই। তাই না হাজার হাজার মধ্যবিত্ত ছেলে-বুড়ো মেয়ে-পুরুষ সংসারে থেকেও সংসারকে না মেনে, দরকার হলে সংসার চুলোয় পাঠিয়ে নতুন আদর্শের লড়ায়ে ভিড়ে গেছে। ছেলেমেয়েরই অবশ্য বেশি। তাদের পক্ষে মায়া কাটিয়ে পুরোনো জঞ্জাল ঝেড়ে ফেলা সহজ। মণি চুপ করে থাকে। গোকুল বুঝে বলে, সংসারে থেকেও এমন অনেকে এসেছে, সংসারের অন্য সকলে যার কাজকর্ম চালচলন অপছন্দ করে। কিন্তু এ সব সংসারে হয় কী, একজনের মতিগতি সকলে অপছন্দ করলেও সকলের মতে ভয়-ভাবনা দ্বিধা-সংশয় থইথই করে। ছোঁয়াচ তো লেগেছে। সবার মনেই। কেউ তাই জোর করে ঠেকায় না। শোভাযাত্রায় মালতীন্দিকে দেখেছিলেন ? ওই সামনের "বাড়ির