পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র সপ্তম খণ্ড.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Coprif 8> কেদার অবশ্য তার মানে জানে। কোনোদিন চোখে না দেখলেও বাপভাই যাকে এনে জুটিয়ে দেবে তার কাছেই সম্পূর্ণরূপে আত্মসমৰ্পণ যে মনের ধর্ম এবং সেটাই যে মনের প্ৰেম, জ্যোতি নিজে বর বেছে নিয়ে নিজে তোড়জোড় কবে বিয়েটা ঘটাবার চেষ্টায় প্ৰাণপাত করলেও এ প্ৰেম আলাদা কিছু নয়, এও সেই একই মানসিক ধর্ম পালন। বিয়ে হবার পর স্বামীকে পছন্দ হলে যা ঘটে, জ্যোতির বেলা বিয়ে হবার আগেই সেটা ঘটেছে। মানে সে জানে। জানে যে এ আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কিছুই নয়-ঘরে ঘরে মেয়েদের দাসীত্ব যে আত্মসমর্পণের ভিত্তি। কিন্তু এ কি প্রেম নয় জ্যোতির ? প্রেম শুধু ঘটেছে তার ও গীতার মধ্যে ? গীতা নিজেকে লোপ করতে রাজি নয়, সমানভাবে স্বাধীনভাবে নিজের বুচি ও পছন্দসই জীবন সে যাপন করবে তার সঙ্গে-নিজেকে সমর্পণ করবে: না । সত্যই কি করবে না ? জ্যোতির মতো গীতাও কি চাইছে না তার প্রেম সফল হোক বাপের সম্মতিতে, তার পছন্দ মতো নীড়ে তার পছন্দ মতো দাম্পত্য জীবনে ? জ্যোতিও তো অবিকল তাই চায়। দুজনের তফাত শুধু মনের গড়নের, পছন্দের। তাছাড়া, সে বড়ো ডাক্তার হয়ে উপাৰ্জন করবে। আর সেই উপার্জন ভোগ করেও সত্যই কি স্বাধীন সত্তা বজায় থাকবে গীতার ? পরিমল যেমন চায়, জ্যোতি চলবে ফিরবে। সেইভাবে। সে যেমন চায় গীতাও চলবে ফিরবে। সেইভাবেই। ፉ না বলে জ্যোতির পাড়ার কোনো বাৰ্ম্মবীর বাড়ি যাওয়া নিয়ে পরিমল মাথা ঘামাবে না। না বলে গীতাব দিল্লি চলে যাওয়াব মধ্যে সে দোষের কিছু খুঁজে পাবে না। পার্থক্যটা তুচ্ছ নয়, সামান্য নয়। নিজেকে সব রকমে সঁপে দিযে গীতা জ্যোতির মতো শুধু তাকে আর রান্নাঘর ভঁাড়ার ঘরকে অবলম্বন করে জীবন কাটাবে ভাবলেও তাব গা ঘিনীঘিন করে। কিন্তু আজ এ কী মুশকিলেই যে সে পড়ে গেল । অ’? কেন তার বারবাব মনে হচ্ছে যে জ্যোতির মতো গীতাও যদি পাগল হয়ে উঠত, তাকে পাওয়ার জন্য জ্যোতির মতো সেও যদি মরিয়া হয়ে উঠত ! নিজের মনটা তার নিশ্চযা পিছিয়ে আছে। সে নিশ্চয় মনে মনে চায় যে সে বড়ো হােক বা না হােক, ডাক্তার পালের টাকায় বিলাত ঘুরে এসে দ্বিতীয় ডাক্তার পাল হােক বা না হােক, তাকে পাবার জন্য গীতা সব কিছু করতে রাজি আছে! সে চিকিৎসক। রোগ নির্ণয় তার পেশা। জ্যোতির কোনো রোগ হয়নি। কিন্তু ডাক্তারি চোখ দিয়ে জ্যোতিকে দেখতে যে খটকা লেগেছে তার মনে এ{ যদি সত্য হয়, এ সমাজে কুমারী মেয়ের পক্ষে সেটা মারাত্মক রোগের চেয়ে বড়ো অভিশাপ। তবু এক বছর দেড় বছর পরে পরিন- বড়োলোক হবে, হর্ষের মত বদলাবে এই আশা পোষণ করছে জ্যোতি । বছরখানেকের মধ্যে পরিমল পসার বাড়াবে টাকা করবে। মোটর কিনবে-কারও আপত্তি থাকবে না। তার হাতে জ্যোতিকে সঁপে দিতে। জ্যোতি নিজে কি টের পায়নি ? অথবা সেই কি ভুল করেছে ? দুপুরে আসত জ্যোতি সকলের বিশ্রামের সময়ে। দু-একটা কথা বলেই সে উপরে চলে যেত।