পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র সপ্তম খণ্ড.pdf/৪৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছন্দপতন৷ 8@や সতীশের সঙ্গে মহিমের বিড়ির দোকানে যাই। জন-সাতেক বিড়ি পাকাচ্ছিল, সতীশ তাদের মধ্যে নিজের জায়গায় বসে পড়ে। মহিম বলে, সকালবেলা যে নববাবু ? তোমাদের একটা কবিতা শোনাতে এলাম ভাই। আরে, কবিতা শোনাবেন! ! আপনার কবিতা ? কবিতা কি বুঝব ? কীসের কবিতা লিখেছেন ? মোদের লিয়ে ? হেসে বলি, শোনই না। শুনে কেমন লাগে বলবে ভাই। একটু দুলে দুলে বিড়ি পাকাতে পাকাতেই তারা কবিতা শুনতে আরম্ভ করে। তারপর হাতের কাজ বন্ধ হয়ে আসে তাদের, মুখ তুলে আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকে। তারাও অভিভূত হয়। তবু, তারাও জানায়, ঠিক বুঝতে পারেনি। আমার কবিতা। রাস্তাতেই কবিতাটা ছিড়ে ফেলে দিই। আর কাউকে শোনাবার দরকার নেই। শত শত বছর। ধরে জীবনের সঙ্গে ধারাবাহিক যে কাব্যবোধ সকলে পেয়েছে বিচিত্র জীবন-চেতনার সাথে, আমার কবিতায় সেই বোধকে নাড়া দিয়েছি। কিন্তু এদের প্রাণের ভাষা জানি না বলে বোধগম্য মানে দিতে ਨੇ ' «ՊhՈ(Հi পড়া ছেড়ে দিলে ঠাকুরপো ? দিলাম। এত সময় শক্তি পয়সা খরচ করলে, আরেকটু ধৈর্য ধরলেই চুকে যেত। পুরো বছরও নয়। নিজের পেশাটা ধাতে আনি ? এমনিই বড়ো দেরি হয়ে গেছে। তুমিই বলেছিলে কবিদের খামখেয়ালি হওয়ার মানে হয় না। আজও তাই বলি। এটা আমার খেয়াল নয়, কর্তব্য দাঁড়িয়ে গেছে। এতদিন দরকার হয়নি, পড়াও ছাড়িনি। কিন্তু এখন ওদিক বজায় রাখতে গেলে আমার আসল কাজ নষ্ট হয়। কোটি কোটি মানুষ আমার মুখ চেযে আছে বউদি, আমি তাদের কবি হব। দেশ বিদেশ আমার কথা শোনার জন্য কান খাড়া করে আছে। সর্বদা কী মনে হচ্ছে জান ? সবাই যেন বলছে, তোমার কত বড়ো কাজ আর তুমি কী ছেলেমানুষি করে সময় নষ্ট করছ ? এ সব মিথ্যে পাগলামি বলে উড়িয়ে দিতে পারব না, কী করি বল ? এ অবস্থায় আর ঢ়িল দেওয়া সম্ভব নয়। বউদির মুখ কালো হয়েই থাকে। কোথায় ঘুরে ঘুরে বেড়াও ? সব জায়গাতেই যাই। গ্রামে বাজারে বস্তিতে মন্দিরে মসজিদে হাটেলে সিনেমায় বন্ধুর বাড়ি আত্মীয়ের বাড়ি সভায়--কাল হাওড়ায় তোমার দাদার বাসায় গিয়েছিলাম। উনি একটু ভালো अछि । দুমাসে যে চেহারা কালি মেরে গেল ? যাক না। চর্বি জন্মেছিল, ক্ষয় হােক। কিন্তু এদিকে তো জমিদারি নেই। কী ক্ষয় হবে ? ভেবো না, আমি ভাবুক কবি নই। সে ব্যবস্থা হবে।