পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র সপ্তম খণ্ড.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Qの মানিক রচনাসমগ্ৰ আছে বইকী। ওই বস্তিতে একেবারে শেষ অবস্থায় ডেকে নিয়ে গেলা-ডবল নিমুনিয়া। কয়েকদিন হোমিয়োপ্যাথি চলছিল, তারপর আমায় ডাকে। বাঁচবে ভাবিনি-শেষ পর্যন্ত বেঁচে গেল। তোমার ভাবনা হয়নি ? ভুলটুল যদি হয়ে যায় ? কনসাল্ট করার কথা ভাবনি ? কেন ? লক্ষণ সব পরিষ্কার, কী করতে হবে জানি, ভুল হবে কেন ? রোগ না ধরতে পারলে, কী বিধান দেব বুঝতে না পারলে আলাদা কথা ছিল। একেই কি বলে আত্মবিশ্বাস ? নিজে যতটা জানি যতটা বুঝি তাই দিয়ে যতটা সম্ভব করলাম তার পরে আর কথা নেই ? যদি ভুল হয়ে থাকে-এ প্রশ্ন অর্থহীন ? কেদার হর্ষের কাছে যায়। জ্যোতির বিয়ের পর হর্ষ মদ খাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে। হঠাৎ যেন সংসার জীবন আর পেশা সম্পর্কে আরও বেশি নিম্পূহ হয়ে গেছে মানুষটা। রোগী আর চিকিৎসা সম্পর্কে পর্যন্ত এখন মাঝে মাঝে তার উদাসীনতা দেখা যায়। হর্ষ তার কথা শূনে হাসে। অনেকদিন পরে কেদার তার মুখে হাসি দেখতে পায়। ও রকম হবে না ? প্ৰত্যেক অনেস্ট ইয়ং ডাক্তারের হয়। এটাই তো প্রমাণ যে তুমি সিরিয়াস, রোগীর জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করতে তুমি নারাজ। দায়িত্বজ্ঞান থেকে এ রকম নার্ভাসনেস আসে, এটা কেটে যাবে কিন্তু দায়িত্বজ্ঞানটা চিবকাল থাকবে। বুড়ো হলাম, এখনও একটা রোগী মরলে তন্নতন্ন করে সব হিসাব করি ভুল করেছি। কিনা-নইলে স্বস্তি পাই না। তুমি তো ছেলেমানুষ। হর্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা বোধ করে কেদার। সে ভুলে গিয়েছিল, হর্ষ তার মনে পড়িয়ে দিয়েছে যে বৈজ্ঞানিকও যন্ত্র নয় মানুষ-বিজ্ঞানের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্যই বিজ্ঞান। তার দ্বিতীয় রোগীটি পাড়ার একটি ছেলে। কুড়ি-বাইশ বছর বয়স, রোগী লম্বা চেহারা কলেজে পড়ে। পাড়ার ছেলে, কাছেই বাড়ি, অনেকদিনের চেনা। মাঝে মাঝে এসে কেদারের সঙ্গে দেশ সমাজ রাজনীতি নিয়ে কথা বলে। নিজেই একটা প্রশ্ন করে কেদারকে, তার মতামত শুনতে চায়, তারপর তর্ক জুড়ে দেয়। বিনীতভাবটা আগাগোড়া বজায় রেখে। কত বিষয়ে যে তার কত মতভেদ দেখা যায় কেদারেব সঙ্গে। মতভেদের জন্যই কেদার সুধীরকে খুব পছন্দ করে। সুধীর একদিন মাথা ফাটিয়ে বাড়ি ফেরে। দুর্ঘটনা নয়, কুঘটনা। একটা সভায় গিয়েছিল, পুলিশ লাঠি মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। গায়ের জামাটি খুলে ফাটা মাথায় জড়িয়ে সে কেদারের কাছে হাজির হয়। প্রচুর রক্তপাত ঘটেছে। ব্যান্ডেজ বাঁধতে বাঁধতে কেদার বলেছিল, সঙ্গে সঙ্গে তোমার হাসপাতালে যাওয়া উচিত ছিল সুধীর। মিছিমিছি হয়তো অ্যারেস্ট হয়ে যেতাম। পরীক্ষা আসছে, তাই ভাগলাম। একটু জুর হয়েছিল সুধীরের। ব্যান্ডেজ খুলবার দিনও মনে হল তার একটু ঘুষ ঘুষে জুর আছে। দু-একবার সে কাশে। কেদারের মনে খটকা লাগে। পরীক্ষা ও জিজ্ঞাসাবাদের পর সে ব্যবস্থা করে বুকের ভেতরের ফটো নেবার এবং স্পেশালিস্ট ডাক্তার সেনকে দিয়ে তাকে পরীক্ষা করবার। দেখা যায় সুধীরকে টি বি ধরেছে। মাথা ফাটার জন্য অবশ্য নয় । মাথা ফাটবার আগেই শুরু হয়েছিল রোগটা।