পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র সপ্তম খণ্ড.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VbSq মানিক রচনাসমগ্ৰ কেদার হেসে বলে, তবে তো কথাই নেই । অঞ্জলি বলে, আসলে দাদা খাঁটি বৈজ্ঞানিক নয়। সে রকম বৈজ্ঞানিক হলে বউ নিয়ে এত বেশি। NENOS PSVG5 ir কেদার আশ্চর্য হয়ে অঞ্জলির মুখের দিকে তাকায়। অঞ্জলি তামাশা করে কথাটা বলেনি। বিচার করে ধরতে পাবুক না পাবুক, সত্যটাকে মোটামুটি অনুভব করে ধরেছে। অঞ্জলির বাইরের রূপটাই শুধু নয়, তার ভিতরেরও একটা বিশেষত্ব ক্ৰমে ক্ৰমে কেদারের কাছে স্পষ্ট হচ্ছিল,-সিহজ বাস্তব-বোধ। হালকা ভাবপ্রবণতাই যার কাছে প্ৰত্যাশা করার কথা, তার মধ্যে ভাবপ্রবণতার ঘাটতিটা এমন বিস্ময়কর মনে হয় কেদারের ! তুমি এভাবেও ভাবতে পার অঞ্জলি ? তোমার মনটা তো বেশ শক্ত হয়ে উঠেছে ! অঞ্জলির মুখের ভাব বদলে যায়। শক্ত না হয়ে উপায় কী বলুন ? খুব সুন্দর হয়ে জন্মেছি যে ! এত রূপ নিয়ে জন্মালে তার দামটা দিতে হবে না ? বৃপের জন্য গর্ব বোধ করার বদলে বৃপের বিরুদ্ধে তার নালিশ অভিভূত করে দেয় কেদারকে। ভেতরটা শক্ত হয়েছে কিন্তু শুকিয়ে যায়নি, ভাবাবেগ তার গভীর ও ঘন হয়েছে। বাস্তবতাকে মেনে নেবার ক্ষমতা জন্মেছে। তার মুখের ভাবে কথা বলার ভঙ্গিতে সেটা প্ৰকাশ পায়। কেদার মৃদুস্বরে বলে, আমি এদিকটা ভাবিনি। অঞ্জলি বলে, অন্য মেয়ের যা হত মস্ত সম্পদ, আমার বেলা সেটাই অভিশাপ হযে, দাঁড়িযেছে। এই সঙ্গে বুদ্ধিটা যদি একটু ভেঁাতা। হত, কোনো কিছুর মানে তলিয়ে বুঝতে না চাইতাম, নিজের বৃপের মোহ নিয়ে দিব্যি কাটিয়ে দিতাম জীবনটা। প্রেমের কথা এত শুনেছি,-পরস্পরকে নিযে যতবেশি মশগুল হওয়া যায়, জগৎ-সংসার ভুলে যাওয়া যায়, ততই নাকি প্রেম গভীর আর খাঁটি প্রমাণ হয়। কত বড়ো একটা মিথ্যা কথা চালু হয়ে আছে ! যার জীবনে বড়ো আদর্শ নেই, বড়ো কিছু নিয়ে মাথা ঘামাবার সাধ নেই, সেই শুধু ও রকম পাগল হতে পারে। একটা মেয়ের জন্য যে সব ভুলে যেতে পারে, সে কী মানুষ ? যার মনুষ্যত্ব নেই। সে কী ভালেবাসতে পাবে ? আমায় নিযে যে যত পাগল হয়েছে, দেখেছি যে মানুষ হিসাবে সে-ই তত বেশি অপদাৰ্থ ! আমিও একদিন পাগল হয়েছিলাম। অঞ্জলি মিষ্টি করে একটু হাসে। সে তো ছেলেমানুষ। আমিও তখন চাইতাম সবাই ও রকম পাগল হােক। পরেও অনেকদিন পর্যন্ত পাগল করতে মজা লেগেছে। তারপর ক্ৰমে ক্ৰমে দেখলাম, কই, কাজের মানুষ তো পাগল হয়। না ? জীবনে যে বড়ো কিছু করতে চায়, সত্যিসত্যি আমার প্রেমে পড়লেও আমার খাতিরে সেটা थोलेिछ कलड ब्रांछि श्व मों। কেদার বলে, শুধু তোমার কেন, কোনো মেয়ের খাতিরেই রাজি হবে না। অঞ্জলি বলে, আমিও সেই সিদ্ধান্তেই পৌঁছেছি। অকৰ্মণ্য বাজে লোকের একটা নেশাকে প্ৰেম বলে চালানো হয়। সত্যিকারের মানুষের প্রেমে বাড়াবাড়ি থাকে না। কেদার একটু হেসে বলে, তুমি উপন্যাসের কত বড়ো বড়ো নায়ককে অমানুষ করে দিলে জানো ? মস্ত মানুষ সব। একটা মেয়ের জন্য যাদের জীবনটা পণ্ড হতে বসে তারা আবার মানুষ । আমার গা ঘিনীঘিন করে। কেদার হেসে বলে, আর যারা উলটােটা করে ? মাঝে মাঝে চুলের মুঠি ধরে পিিটয়ে দেয় ? অঞ্জলি একটু হাসে।