পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র সপ্তম খণ্ড.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ჯტ8 মানিক রচনাসমগ্ৰ কী হয়েছে ? যা হবার তাই হয়েছে। এত ন্যাকামি মানুষের সহ্য হয় ? কিছুদিন ধরে কেমন একটু গভীর গভীব ভাব দেখছিলাম পরিমালদার। জ্যোতিকেও কেমন যেন মনমরা মনে হচ্ছিল। দুজনে ঝগড়াঝাটি হয়েছে নিশ্চয়। আজ পরিমালদা আমায় আদা দিয়ে একটু চা করে দিতে বলেছিল, সর্দি হয়েছে। ওদের তো চায়ের পাট নেই, পরিমালদাই জোর করে বন্ধ করেছিল। জ্যোতি নিশ্চয় পরামর্শ দিয়েছিল। আমি চা করে নিয়ে গিয়ে পরিমালদার হাতে কাপটা দিয়ে ওদের বিছানায় একটু বসতে গেছি।--জ্যোতি বললে কী, না ভাই বিছানায় বোসো না, তুমি রাঁধছিলো। শুনেই কী রাগ পরিমালদার । একেবারে গর্জন করে ফেটে পড়ল। একটা মাতালের মেয়ে, ভদ্রতা জানে না, গেয়ো অসভ্য ভূত-যা মুখে এল তাই বলতে লাগিল জ্যোতিকে। আমি যত বলি, থাক না পরিমালদা, ওতে কী হয়েছে-কে সে কথা Çeन्म ! জ্যোতি কী করল ? আস্তে আস্তে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। কিছু বলল না ? বেলা তখন এগারোটা বাজে। হর্ষের শরীরটা খারাপ থাকায় সে আজ তাকে একটি রোগীর কাছে পাঠিয়েছিল-যেখানে যাওয়া উচিত ছিল হর্ষের নিজের। রোগীর অবস্থা দেখে সে হর্ষকে ডেকে নিতে লোক পাঠিয়েছিল, হর্ষ যায়নি। বলে পাঠিয়েছিল যা কিছু দরকার কেদার করলেই হবে। তার এই বিশ্বাসে খুশি হওয়ার বদলে কেদার বিরক্তই হয়েছে। কারণ, রোগীর আত্মীয়স্বজনেব ভাব দেখে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিল যে হর্ষ যাই ভাবুক, এই ছোকরা ডাক্তারের উপর তাদের মোটেই বিশ্বাস নেই। ওষুধ খাইয়ে ইনজেকশন দিয়ে দু-ঘণ্টা ঠায় বসে থেকে রোগীকে লক্ষ করতে হয়েছে। কেদারের। আবার সে বোব করেছে। অসহায় ভাব-হর্ষ ডাক্তারের রোগী যদি তার হাতে মারা যায় । ক্রাইসিসটা কেটে গেলেও খুশি হবার বদলে শ্ৰান্ত ও বিরক্ত হয়ে সে বাড়ি ফিরেছে। খিদে (PGC 550 অমলার কাছে জ্যোতির খবর শুনে সে শ্রাস্তিক্লাস্তি ক্ষুধাতৃষ্ণ সব ভুলে যায়। ভাবে, এত তাড়াতাড়ি প্রতিক্রিয়া শুরু হল ? অমলা বলে, তারপরে শোনো দাদা। সে এক অবাক কাণ্ড । কেদার ভাবে, আমলাও আজকাল সাজিয়ে গুছিয়ে রস দিয়ে কথা বলতে শিখেছে। অমলা বলে যায়, খানিক পরে বাজারে গিয়ে পরিমালদা মস্ত একটা ইলিশ মাছ আর মাংস কিনে নিয়ে এল। আমায় এ বেলা খেতে বলেছে। ওদের দুজনেরই মাথা খারাপ। আমায় কী বলল শুনবে ? বলল, কেদারকেও বলব ভাবছি, কিন্তু লজ্জা করছে। কেদার মাছ মাংস খাবে আর মনে মনে হাসবে। কেদার সঙ্গে সঙ্গে বলে, যা, বলে আয়, আমিও খাব। খিদে পেয়েছে, রান্না হলেই যেন খবর পাই। অমলা ঘরের বাইরে গিয়েছে, সে তাকে ডেকে ফিরিয়ে আনে। বলে, শোন, আগে বরং জ্যোতিকে জিজ্ঞেস করে আয়, আমি খেতে যাব নাকি। বলিস, আমি জানতে চেয়েছি। অমলা একটু মুখ ভার করে চেয়ে থাকে।