পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র সপ্তম খণ্ড.pdf/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〔中州 brዒ খানিক পরে জ্যোতি বলে, বাবা, হাসপাতালে নয়, আমায় বাড়ি নিয়ে চলো। হর্ষ বলে, তাই চলো। SO আশ্বিনের দুটি উজ্জ্বল দিন আর চাঁদ ও তারা-ভরা মনোরম রাত দাবুণ কষ্ট ভোগ করে তৃতীয় দিন সকালে জ্যোতি যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেল একেবারে জ্ঞান হারিয়ে, ফিবে যা আর আসবে না মনে হল হর্ষ ডাক্তারের দুজন সমবয়সি নামকরা অন্তরঙ্গ ডাক্তার ভূপেশ ও কালীপদার। বেলা তখন দশটা হবে। শেষ রাত্রে আকাশে মেঘ ঘনিয়েছিল, বাইবে বৃষ্টি পড়ছে টিপি টিপি, আকাশ মেঘে ঢাকা, গুমোট হয়েছে এমন দারুণ যেন বাতাস ভান করেছে মবণের,-প্রচণ্ড ঝড়ের রূপ ধরে এসে এ তামাশা শেষ করবে। আশঙ্কা হয়। দোতলার দক্ষিণ কোণের ছোটো ঘরের হওয়া পোড়া কয়লার গন্ধে ও ভাপে ভারী ও গরম। আবছা আঁধারটাও ভয় ও বিষাদে ভারী, চোখ কটকট করে, ভেতরে চাপ লাগে, জানালাগুলি প্রায় বন্ধ, মোটে দুটি জানালা ঘরে। ছোটাে জানালাটির একটি খড়খড়ি শুধু তোলা। জ্যোতির ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা। ঠান্দা লাগার ফল সাংঘাতিক হতে পারে। সেকের ও তাপের উপকারিতা অনেক। তিনটে হট ওয়াটার ব্যাগ জ্যোতির গায়ে লাগানো হযেছে। ভাঙা কড়ায়ে কাঠকয়লার আগুন জেলে শুকনো সেঁকের উপকারিতা আছে, ঘরে ঘরে চিরকাল প্ৰসূতিকে এভাবে সেঁক দিয়ে আসা হয়, ঘরের মধ্যেই কয়লা জেলে। দেয়াল ঘেঁষে পুরানো ছেড়া তোশকের ওপর মস্ত অয়েলক্লথ বিছিয়ে জ্যোতির বিছানা হয়েছে ! তোশকটা ছিড়ে কিছু নতুন তুলো দিয়ে নতুন তোশক করার কথা হয়েছিল গতবছর শীতকালে, হর্ষ ডাক্তারের মেজো মেয়ে কিরণ এসে বাচ্চাকাচা নিয়ে মাস ছয়েক ব্যবহার করে যাওয়ায় এমন অবস্থা হয়েছে তোশকটার যে তুলোও আর কোনো কাজে লাগবে না। অয়েলক্লথটা আগে কেউ ব্যবহার করেনি, ওটা হর্ষ ডাক্তারের ডিসপেনসারি থেকে আনা। জিনিসটা একটু পুরানো, কয়েকবছর দোকানে পড়ে থাকায় ফেটে চিড় খেয়ে গেছে, চলটা উঠতে শুরু করেছে। আস্ত একটা শিটের এটুকু কেউ কিনতে চায়নি, কম দামে দিতে চাইলেও নয়। এতদিনে জিনিসটা কাজে লাগল। জ্যোতির মাথায় একটা ওয়াড়হীন তেলচিােট বালিশ। ভূপেশ ও কালিপদ অভিজ্ঞ ডাক্তার, কাজের বিষয় ছাড়া বাজে খুঁটিনাটি নিয়ে তারা মাথা ঘামায় না। ডাক্তার হবার আগে পনেরো-বিশবছর এবং ডাক্তার হবার পরেও ত্রিশ-পয়ত্ৰিশবছর ধরে প্রসবের ঘরে এই রকম গন্ধ, ভাপ বিছানাপত্ৰাদিই তাদের অভ্যাস ও অভিজ্ঞতা। বাড়ির মেয়েরা ভিড় করে, কেউ কেউ কঁদেও-যাদের প্রাণ খুব নরম। পাড়ার মেয়েরাও জড়ো হয় ! এ সবও স্বাভাবিক, সঙ্গত। ডাক্তার কেউ উপস্থিত না থাকার সময় কী হয় না হয় তা নিয়েই বা হাঙ্গামা করার মানে কী আছে। চিকিৎসার যে ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে সেগুলি ঠিকমতো পালন করা হয়েছিল। কিনা সে তো জিজ্ঞাসা করাই হয়। নার্স শোভা তিনবার করে আসছে, সকালে দুপুরে ও সন্ধ্যায়। আজ সে এখনও এসে পৌঁছোয়নি, আসবার সময় মিনিট পনেরো পার হয়ে গেছে।