পাতা:মানিনী - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২
দারােগার দপ্তর, ১৬১ সংখ্যা।

পারিলেন না। এত দিবস পর্য্যন্ত তিনি যাহা কিছু সংগ্রহ করিয়াছিলেন, প্রথমতঃ তাহা ব্যয়িত হইয়া গেল। রাজকিশোরী যখন দেখিলেন যে, সঞ্চিত অর্থ সমস্তই ব্যয় হইয়া গেল, তখন এক এক খানি করিয়া আপনার গাত্র হইতে অলঙ্কার সকল উন্মোচিত করিয়া তাহা বিক্রয় করিতে লাগিলেন, এবং খরচ যতদূর কম করিবার সম্ভাবনা, তাহা করিয়া নিতান্ত কষ্টের সহিত সংসার চালাইতে লাগিলেন। কিন্তু এত কষ্টে থাকিলেও একদিবসের জন্য তাঁহার মুখে কেহ কখনও কষ্টের চিহ্ন দেখিতে পাইলেন না। সময়ে সময়ে তিনি আপনি না খাইয়া স্বামী ও দেবরের সেবা করিতে লাগিলেন। ইহার অবস্থা দেখিয়া, ইহার চরিত্র দেখিয়া, ইহাঁর স্বামী-ভক্তি দেখিয়া ও সর্ব্বদা ইহার মুখে মিষ্ট কথা শুনিয়া সেই সময় বিপিন একদিন আপনার মনের ভাব প্রকাশ করিয়া ফেলিলেন ও কহিলেন, “শিক্ষিত ও অশিক্ষিত স্ত্রীলোকের মধ্যে যে কি প্রভেদ, তাহা আমি এখন বুঝিতে পারিতেছি; কিন্তু ইহা যদি পূর্ব্বে বুঝিতে পারিতাম, তাহা হইলে আমার আজ এ দশা ঘটিত না।”

 এইরূপ কষ্ট একবৎসর কাল অতীত হইতে না হইতেই রজনীকান্তের উপর ঈশ্বর পুনরায় প্রসন্ন হইলেন। পূর্ব্বের চাকরী অপেক্ষা এবার তাঁহার একটী ভাল চাকরী জুটিল। অতি অল্প দিবসের মধ্যেই তিনি তাঁহার অবস্থার পরিবর্ত্তন করিয়া ফেলিলেন। অলঙ্কার-পত্র প্রভৃতি যে সকল দ্রব্যাদি তাঁহাকে বিক্রয় করিতে হইয়াছিল, অনতিবিলম্বেই তিনি তাহা পুনরায় প্রস্তুত করাইলেন, এবং পূর্ব্বে যাহা কিছু ছিল, এবার তাহা অপেক্ষা অনেক অধিক হইল। ক্রমে নিজে একখানি বাটী খরিদ করিয়া তাহাতে গিয়া