পাতা:মানিনী - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানিনী।

হইলেন না। কারণ, রজনীকান্ত সকলের নিকট ঋণী। বিপিনকে লেখাপড়া শিখাইবার নিমিত্ত যখন যে টাকার প্রয়োজন হইয়াছে, তখনই রজনীকান্ত তাহার সংস্থান করিয়া দিয়াছেন। যে পর্য্যন্ত নিজের বিষয়াদি বা অলঙ্কার-পত্র ছিল, সেই পর্য্যন্ত তাহা বিক্রয় করিয়া বা বন্ধক দিয়া তদ্দ্বারা অর্থের সংস্থান হইত। সেই সমস্ত অর্থ যখন নিঃশেষিত হইয়া গেল, তখন অপরের নিকট ঋণ করিতে আরম্ভ করিলেন। এইরূপে ক্রমে ক্রমে প্রায় সকলের নিকটেই তিনি ঋণগ্রস্ত হইয়া পড়ায় এখন কেহ আর তাঁহাকে ঋণদানে সম্মত হইলেন না; সুতরাং বিপিনের লেখাপড়া এইস্থানে বন্ধ হইল।

 অর্থাভাবে বিপিনের লেখাপড়া বন্ধ হইল বলিয়া রজনীকান্ত ও তাঁহার অশিক্ষিতা স্ত্রী রাজকিশোরীর অন্তঃকরণে বিশেষরূপ কষ্ট হইতে লাগিল কিন্তু বিপিন এক দিবসের নিমিত্তও দুঃখিত হইলেন না। কারণ, আর অধিক লেখাপড়া শিখিবার ইচ্ছা তাঁহার মন হইতে এখন দূরে পলায়ন করিয়াছিল। এখন তাঁহার বিষম চিন্তার আবির্ভাব হইয়াছে। এখন তিনি বিধবাদিগের বৈধব্যযন্ত্রণায় রোদন করিতে শিক্ষা করিয়াছেন। সেই অবরোধ প্রথার নিমিত্ত বৃদ্ধ সমাজপতিগণকে শত সহস্র গালি দিতে আরম্ভ করিয়াছেন। স্ত্রীলোকদিগকে অশিক্ষিতাবস্থায় রাখা হইয়াছে বলিয়া সমাজের বৃদ্ধগণের সহিত নানা তর্ক করিতে শিখিয়াছেন! এরূপ অবস্থায় তাঁহার আর লেখাপড়া ভাল লাগিবে কেন?