পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানুষের ধর্ম্ম
৮৯

বায়ুমণ্ডলেই পৃথিবীর সেই জানলা খোলা রয়েচে যেখানে নক্ষত্রলোক থেকে অন্ধকার পেরিয়ে প্রতিরাত্রে দূত আসচে আত্মীয়তার জ্যোতির্ম্ময় বার্ত্তা নিয়ে। এই তার প্রসারিত বায়ুমণ্ডলকেই বলা যেতে পারে পৃথিবীর উদ্বৃত্ত ভাগের আত্মা, যেমন পূর্ণ মানুষকে বলা হয়েচে, ত্রিপাদস্যামৃতম্‌ তাঁর এক অংশ প্রত্যক্ষ বাকি তিন অংশ অমৃতরূপে তাঁকে ছাড়িয়ে আছে ঊর্দ্ধে। এই সূক্ষ্মবায়ুলোক ভূলোকের একান্ত আপনারই ব’লে সম্ভব হয়েচে পৃথিবীর ধূলিস্তরে এত বিচিত্র ঐশ্বর্য্য বিস্তার যার মূল্য ধূলির মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি।

 উপনিষদ বলেন অসম্ভূতি ও সম্ভূতিকে এক ক’রে জানলেই তবে সত্য জানা হয়। অসম্ভূতি, যা অসীমে অব্যক্ত, সম্ভূতি যা দেশে কালে অভিব্যক্ত। এই সীমায় অসীমে মিলে মানুষের সত্য সম্পূর্ণ। মানুষের মধ্যে যিনি অসীম তাঁকে সীমার মধ্যে জীবনে সমাজে ব্যক্ত করে তুলতে হবে। অসীম সত্যকে বাস্তব সত্য করতে হবে। তা করতে গেলে কর্ম্ম চাই। ঈশোপনিষদ তাই বলেন শত বৎসর তোমাকে বাঁচতে হবে কর্ম্ম তোমার না করলে নয়। শত বৎসর বাঁচাকে সার্থক করো কর্ম্মে, এমনতরো কর্ম্মে যাতে প্রত্যয়ের সঙ্গে প্রমাণের সঙ্গে বলতে পারা যায় সোঽহম্‌। এ নয় যে, চোখ উলটিয়ে নিশ্বাস বন্ধ করে বসে থাকতে হবে মানুষের থেকে দূরে।

১২