পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০২
মানুষের ধর্ম্ম

হয়ত। এমন সময় উপনয়ন হ’ল। উপনয়নের সময় গায়ত্রী মন্ত্র দেওয়া হয়েছিল। কেবলমাত্র মুখস্থভাবে না। বারংবার সুস্পষ্ট উচ্চারণ ক’রে আবৃত্তি করেচি এবং পিতার কাছে গায়ত্রী মন্ত্রের ধ্যানের অর্থ পেয়েচি। তখন আমার বয়স বারো বৎসর হবে। এই মন্ত্র চিন্তা করতে করতে মনে হ’ত বিশ্বভুবনের অস্তিত্ব আর আমার অস্তিত্ব একাত্মক। ভূ ভূর্বঃ স্বঃ—এই ভূলোক অন্তরীক্ষ, আমি তারি সঙ্গে অখণ্ড। এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আদি অন্তে যিনি আছেন তিনিই আমাদের মনে চৈতন্য প্রেরণ করচেন। চৈতন্য ও বিশ্ব; বাহিরে ও অন্তরে সৃষ্টির এই দুই ধারা এক ধারায় মিলচে।

 এমনি ক’রে ধ্যানের দ্বারা যাকে উপলব্ধি করচি, তিনি বিশ্বাত্মাতে আমার আত্মাতে চৈতন্যের যোগে যুক্ত। এই রকম চিন্তার আনন্দে আমার মনের মধ্যে একটা জ্যোতি এনে দিলে। এ আমার সুস্পষ্ট মনে আছে।

 যখন বয়স হয়েচে, হয়ত আঠারো কি ঊনিশ হবে বা বিশও হ’তে পারে, তখন চৌরঙ্গীতে ছিলুম দাদার সঙ্গে। এমন দাদা কেউ কখনও পায়নি। তিনি ছিলেন একাধারে বন্ধু ভাই সহযোগী।

 তখন প্রত্যূষে ওঠা প্রথা ছিল। আমার পিতাও খুব প্রত্যূষে উঠতেন। মনে আছে একবার ডালহৌসি