একটা সমগ্র আন্তরিক সার্থকতা পেয়েচে। পাবনার গ্রামবাসী কবি যখন প্রতিকূল প্রণয়িনীর মানভঞ্জনের জন্যে ‘ট্যাহা দামের মোটরি’ আনার প্রস্তাব করেন তখন মোটরির দাম এক টাকার চেয়ে অনেক বেড়ে যায়। এই মোটরি বা গোলাপের আন্তরিক অর্থটি যখন দেখতে পাই তখনই সে সুন্দর। সেদিন তাই আশ্চর্য্য হ’য়ে গেলুম। দেখলুম সমস্ত সৃষ্টি অপরূপ। আমার এক বন্ধু ছিল সে সুবুদ্ধির জন্যে বিশেষ বিখ্যাত ছিল না। তার সুবুদ্ধির একটু পরিচয় দিই। একদিন সে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘আচ্ছা, ঈশ্বরকে দেখেচ?’ আমি বললুম, ‘না, দেখিনি তো।’ সে বললে, ‘আমি দেখেচি।’ জিজ্ঞাসা করলুম, ‘কী রকম?’ সে উত্তর করলে, ‘কেন? এই যে চোখের কাছে বিজ্-বিজ্ করচে।’ সে এলে ভাবতুম, বিরক্ত করতে এসেচে। সেদিন তাকেও ভালো লাগল। তাকে নিজেই ডাকলুম। সে দিন মনে হ’ল তার নির্ব্বুদ্ধিতাটা আকস্মিক, সেটা তার চরম ও চিরন্তন সত্য নয়। তাকে ডেকে সেদিন আনন্দ পেলুম। সেদিন সে ‘অমুক’ নয়। আমি যার অন্তর্গত সেও সেই মানবলোকের অন্তর্গত। তখন মনে হ’ল এই মুক্তি। এই অবস্থায় চার দিন ছিলুম। চার দিন জগৎকে সত্যভাবে দেখেচি। তারপর জ্যোতিদা বললেন, ‘দার্জিলিঙ চলো।’ সেখানে গিয়ে
পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৪
মানুষের ধর্ম্ম