পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৪
মানুষের ধর্ম্ম

থেকে লোকালয়ের লীলা দেখতে ভালো লাগত। পদ্মায় আমার জীবনযাত্রা ছিল জনতা থেকে দূরে। নদীর চর—ধূ-ধূ বালি, স্থানে স্থানে জলকুণ্ড ঘিরে জলচর পাখী। সেখানে যে-সব ছোট গল্প লিখেচি তার মধ্যে আছে পদ্মাতীরের আভাস। সাজাদপুরে যখন আসতুম চোখে পড়ত গ্রাম্য জীবনের চিত্র, পল্লীর বিচিত্র কর্ম্মোদ্যম। তারই প্রকাশ ‘পোষ্টমাষ্টার’ ‘সমাপ্তি’ ‘ছুটি’ প্রভৃতি গল্পে। তাতে লোকালয়ের খণ্ড খণ্ড চলতি দৃশ্যগুলি কল্পনার দ্বারা ভরাট করা হয়েচে।

 সেই সময়কার এক দিনের কথা মনে আছে। ছোট শুকনো পুরানো খালে জল এসেচে। পাঁকের মধ্যে ডিঙিগুলো ছিল অর্দ্ধেক ডোবানো, জল আসতে তাদের ভাসিয়ে তোলা হ’ল। ছেলেগুলো নতুন জলধারার ডাক শুনে মেতে উঠেচে। তার দিনের মধ্যে দশবার ক’রে ঝাঁপিয়ে পড়চে জলে।

 দোতলার জানলায় দাঁড়িয়ে সে দিন দেখছিলুম, সামনের আকাশে নববর্ষার জলভারনত মেঘ, নীচে ছেলেদের মধ্যে দিয়ে প্রাণের তরঙ্গিত কল্লোল। আমার মন সহসা আপন খোলা দুয়ার দিয়ে বেরিয়ে গেল বাইরে সুদূরে। অত্যন্ত নিবিড়ভাবে আমার অন্তরে একটা অনুভূতি এল, সামনে দেখতে পেলুম নিত্যকালব্যাপী একটি সর্ব্বানুভূতির অনবচ্ছিন্ন ধারা, নানা প্রাণের বিচিত্র