পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানুষের ধর্ম্ম
৩৩

জ্যোতির্ব্বিদ দেখলেন কোনো গ্রহ আপন কক্ষপথ থেকে বিচলিত। নিঃসন্দেহ মনে বললেন অন্য কোনো অগোচর গ্রহের অদৃশ্য শক্তি তাকে টান দিয়েচে। দেখা গেল মানুষেরও মন আপন প্রকৃতিনির্দ্দিষ্ট প্রাণধারণের কক্ষপথ যথাযথ আবৃত্তি করে চলচে না। অনির্দ্দিষ্টের দিকে স্বভাবের অতীতের দিকে ঝুঁকচে। তার থেকে মানুষ কল্পনা করলে দেবলোক। বললে, আদেশ সেইখানকার, আকর্ষণ সেখান হতে। কে সেই দেবলোকের দেবতা তা নিয়ে মানুষে মানুষে হানাহানি চলেচে। যিনিই হোন, তাঁকে দেবতাই বলি আর যাই বলি, মানুষকে জীবসীমার মধ্যে কিছুতেই স্থির থাকতে দিলেন না।

সমুদ্র চঞ্চল হোলো। জোয়ারভাঁটার ওঠা-পড়া চলচেই। চাঁদ না দেখা গেলেও সমুদ্রের চাঞ্চল্যেই চাঁদের আহ্বান প্রমাণ হোতে। বাঁচবার চেষ্টাতেও মানুষ অনেক সময় মরে। যে-ক্ষুধা তার অন্তরে, নিঃসংশয়,—তার লক্ষ্য যে তার বাইরেও সত্য সে কথাটা সদ্যোজাত শিশুও স্বতই জানে। মানুষের প্রাণান্তিক উদ্যম দেখা গেছে এমন-কিছুর জন্যে যার সঙ্গে বাঁচবার প্রয়োজনের কোনো যোগই নেই। মৃত্যুকে ছাড়িয়ে আছে যে-প্রাণ সেই তাকে দুঃসাহসের পথে এগিয়ে নিয়ে চলেচে। ভৌতিক প্রাণের পথে