পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানুষের ধর্ম্ম
৩৫

ভাব। ভারতবর্ষেও দেখি কত লোক, কেউ বা ঊর্দ্ধবাহু, কেউ বা কণ্টক-শয্যায় শয়ান, কেউ বা অগ্নি-কুণ্ডের দিকে নতশীর্ষ। তারা জানাচ্চে তারা শ্রেষ্ঠ, তারা সাধু, কেননা তারা অস্বাভাবিক। আধুনিক পাশ্চাত্যদেশেও কত লোক নিরর্থক কৃচ্ছ্রসাধনের গৌরব করে। তাকে বলে রেকর্ড ব্রেক করা, দুঃসাধ্যতার পূর্ব্ব অধ্যবসায় পার হওয়া। সাঁতার কাটচে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, বাইসিক্‌লে অবিশ্রাম ঘুরপাক খাচ্চে, দীর্ঘ উপবাস করচে স্পর্দ্ধা করে, কেবলমাত্র অস্বাভাবিকতার গৌরব প্রচারের জন্যে। ময়ূরকে দেখা যায় গর্ব্ব করতে আপন ময়ূরত্ব নিয়েই, হিংস্রজন্তু উৎসাহ বোধ করে আপনার হিংস্রতার সাফল্যে। কিন্তু বর্ব্বর মানুষ মুখশ্রীর বিকৃতি ও বেশভূষার অতিকৃতি নিয়ে গর্ব্ব করে, জানায় আমি ঠিক মানুষের মতো নই, সাধারণ মানুষরূপে আমাকে চেনবার জো নেই। এমনতরো আত্মপ্রকাশের চেষ্টাকে বলি নঙর্থক, এ সদর্থক নয়, প্রকৃতির বিরুদ্ধে স্পর্দ্ধা মাত্র, যা তার সহজ তার প্রতিবাদমাত্র, তার বেশি আর কোনো অর্থ এতে নেই। অহঙ্কারের প্রকাশকে আত্মগৌরবের প্রকাশ বলে মনে করা বর্ব্বরতা, যেমন নিরর্থক বাহ্যানুষ্ঠানকে মনে করা পুণ্যানুষ্ঠান।

এ যেমন দৈহিক দিকে তেমনি আর্থিক দিকেও মানুষের স্পর্দ্ধার অন্ত নেই। এখানেও রেকর্ড ব্রেক