পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮
মানুষের ধর্ম্ম

এমন গোঁড়ামির কথা যদি বলি তাহলে আজও বলতে হবে সূর্য্যই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করচে। ধর্ম্মসম্বন্ধে সাধারণত এই ভুলই ঘটে, সম্প্রদায় আপন মতকেই বলে ধর্ম্ম, আর ধর্ম্মকেই করে আঘাত। তারপরে যে বিবাদ, যে নির্দ্দয়তা, যে বুদ্ধিবিচারহীন অন্ধসংস্কারের প্রবর্ত্তন হয় মানুষের জীবনে আর কোনো বিভাগে তার তুলনাই পাওয়া যায় না।

 এ কথা মানতে হবে ভুল মত মানুষেরই আছে জন্তুর নেই। আদিম কাল থেকে আজ পর্য্যন্ত ভুলমতবাদের উদ্ভব হচ্চে, যে হেতু মানুষের একটা দুর্নিবার সমগ্রতার বোধ আছে। কোনো একটা তথ্য যখন স্বতন্ত্রভাবে বিচ্ছিন্নভাবে তার সামনে আসে তখন তাকেই সম্যক ব’লে সে স্বীকার ক’রে নিতে পারে না। তাকে পূর্ণ করবার আগ্রহে কল্পনার আশ্রয় নেয়। সেই কল্পনা প্রকৃতিভেদে মূঢ় বা প্রাজ্ঞ, সুন্দর বা কুৎসিত, নিষ্ঠুর বা সকরুণ নানা প্রকার হতে পারে। কিন্তু মূল কথাটা হচ্চে তার এই বিশ্বাস যে, প্রত্যক্ষ বিচ্ছিন্নতাকে পরিপূর্ণ ক’রে আছে অপ্রত্যক্ষ নিখিলতার সত্য। সমগ্রকে উপলব্ধি করবার যে প্রেরণা আছে তার মনে, সেই তার ভূমার বোধ।

 মানুষ অন্তরে বাহিরে অনুভব করে সে আছে একটি নিখিলের মধ্যে। সেই নিখিলের সঙ্গে সচেতন