পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭০
মানুষের ধর্ম্ম

সীমায় তার রূপান্তর ঘটে। যে মানুষ সত্যের জন্যে জীবন উৎসর্গ করেচে দেশের জন্যে, লোকহিতের জন্যে,—বৃহৎ ভূমিকায় যে নিজেকে দেখচে, ব্যক্তিগত সুখদুঃখের অর্থ তার কাছে উল্‌টো হয়ে গেছে। সে মানুষ সহজেই সুখকে ত্যাগ করতে পারে এবং দুঃখকে স্বীকার ক’রে দুঃখকে অতিক্রম করে। স্বার্থের জীবনযাত্রায় সুখদুঃখের ভার গুরুতর, মানুষ স্বার্থকে যখন ছাড়িয়ে যায় তখন তার ভার এত হাল্‌কা হয়ে যায় যে, তখন পরম দুঃখের মধ্যে তার সহিষ্ণুতাকে পরম অপমানের আঘাতে তার ক্ষমাকে অলৌকিক ব’লে মনে হয়। আপনাকে বৃহতে উপলব্ধি করাই সত্য, অহংসীমায় অবরুদ্ধ জানাই অসত্য। ব্যক্তিগত দুঃখ এই অসত্যে।

 আমরা দুঃখকে যে ভাবে দেখি বৃহতের মধ্যে সে ভাব থাকতে পারে না, যদি থাকত তাহলে সেখানে দুঃখের লাঘব বা অবসান হ’ত না। সঙ্গীতের অসম্পূর্ণতায় বিস্তর বেসুর আছে, সেই বেসুরের একটিও থাকতে পারে না সম্পূর্ণ সঙ্গীতে—সেই সম্পূর্ণ সঙ্গীতের দিকে যতই যাওয়া যায় ততই বেসুরের হ্রাস হ’তে থাকে। বেসুর আমাদের পীড়া দেয়, যদি না দিত তাহলে সুরের দিকে আমাদের যাত্রা এগোত না। তাই বিরাটকে বলি রুদ্র, তিনি মুক্তির দিকে আকর্ষণ করেন দুঃখের পথে। অসর্ণতাকে ক্ষয় করার দ্বারা পূর্ণের সঙ্গে মিলন