পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মানুষের ধর্ম্ম
৭১

বিশুদ্ধ আনন্দময় হবে এই অভিপ্রায় আছে বিশ্বমানবের মধ্যে। তাঁর প্রতি প্রেমকে জাগরিত ক’রে তাঁরই প্রেমকে সার্থক করব যুগে যুগে এই প্রতীক্ষার আহ্বান আসচে আমাদের কাছে।

 সেই আহ্বানের আকর্ষণে মানুষ বেরিয়ে পড়েচে অজানার দিকে, এই যাত্রার ইতিহাসই তার ইতিহাস। তার চলার পথপার্শ্বে কত সাম্রাজ্য উঠল এবং পড়ল, ধনসম্পদ হোলো স্তূপাকৃত আবার গেল মিলিয়ে ধূলোর মধ্যে। তার আকাঙ্ক্ষাকে রূপ দেবার জন্যে কত প্রতিমা সে গড়ে তুললে আবার ভেঙে দিয়ে গেল, বয়স পেরিয়ে ছেলে-বেলাকার খেলনার মতো। কত মায়ামন্ত্রের চাবি বানাবার চেষ্টা করলে, তাই দিয়ে খুলতে চেয়েছিল প্রকৃতির রহস্যভাণ্ডার, আবার সমস্ত ফেলে দিয়ে নূতন ক’রে খুঁজতে বেরিয়েচে গহনে প্রবেশের গোপন পথ,—এমনি ক’রে তার ইতিবৃত্তে এক যুগের পর আর এক যুগ আসচে, মানুষ অশ্রান্ত যাত্রা করেচে অন্নবস্ত্রের জন্যে নয়, আপনার সমস্ত শক্তি দিয়ে মানবলোকে মহামানবের প্রতিষ্ঠা করবার জন্যে, আপনার জটিল বাধার থেকে আপনার অন্তরতম সত্যকে উদ্ধার করবার জন্যে; সেই সত্য যা তার পুঞ্জিত দ্রব্যভারের চেয়ে বড়ো, তার সমস্ত কৃতকর্ম্মের চেয়ে বড়ো, তার সমস্ত প্রথামত বিশ্বাসের চেয়ে বড়ো, যার মৃত্যু নেই, যার ক্ষয়